২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতের প্রধানমন্ত্রীও ভোটে হারেন আবার টেন্ডুলকারও আউট হন : সৌরভ গাঙ্গুলি

ভারতের প্রধানমন্ত্রীও ভোটে হারেন আবার টেন্ডুলকারও আউট হন : সৌরভ গাঙ্গুলি - ছবি : সংগৃহীত

'আপনি শাচীন টেন্ডুলকারের সাথে যখন ব্যাটিং করেছেন, আপনার তখন ভয় করেনি?' ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলিকে প্রায় সময় এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ব্যাটিংয়ের সময় আমি উনাকে দেখতামই না। কারণ ক্রিকেট ১১ জনের খেলা। খেলায় স্কোর হয় ক্রিজে দু’জন ক্রিকেটারের রানে।‘ নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসই সবার সাফল্যের মূলমন্ত্র বলে দাবি করেছেন ভারতীয় সাবেক এই বাহাতি ক্রিকেটার।

ভারতের হুগলি জেলার বেনডেনে একটি অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউটের প্রি-কাউন্সিলিং এক সেশনে শিক্ষার্থীদের সামনে সৌরভ গাঙ্গুলি তার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছিলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তুমি নিজেকে যা মনে করো সেটাই তুমি। তোমাকে তোমার টিচার বলতে পারে তুমি ইউজলেস (অযোগ্য), তোমার কলিগ তোমাকে বলতে পারে তুমি কোনো কাজের না, পাড়ার লোকে বলতে পারে তুমি পারবে না। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করবে তুমি যা পারো সেটা আর কেউ পারবে না। পারি না শুনে নিজেকে গুটিয়ে ফেলাটা সব থেকে সহজ কাজ। পারি না শুনেও নিজের ওপর আস্থা রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’

’ভারতের প্রধানমন্ত্রীও ভোটে হারেন আবার শাচীন টেন্ডুলকারও আউট হন। জীবনে হারতে হবে আবার উঠে দাঁড়ানোর জন্য। তোমরা জানো শাচীন টেন্ডুলকার তার ক্যারিয়ারে ৭০০ ম্যাচ খেলেছেন। ১০০ ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন। তারমানে বাকি ৬০০ ম্যাচে তো তিনি সেঞ্চুরি করেন নি। কিন্তু প্রত্যেক ম্যাচে তিনি নিজের ওপর আস্থা রেখেছেন যে তিনি পারবেন। তার নিজের ওপর থাকা সেই আত্মবিশ্বাস তাকে ১০০ ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে সাহায্য করেছে।’

’প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বলতে হবে আমি পারব। তোমার জায়গা থেকে তুমি যা যা পারো সেটা আর কেউ ভালো পারবে না। সেই কাজটা তুমি যদি সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা কর।’

তিনি বলেন, আমরা ভারতের বলিউডের সেরা অভিনেতা শাহরুখ খানকে একবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাজঘরে তার সাফ্যলের জন্য বাহবা দিয়ে বলেছিলাম, তুমি খুব ভাগ্যবান। তোমার কাজের উপর কেউ প্রভাব খাটাতে পারে না। সবাই তোমাকে পছন্দ করে।

সৌরভ গাঙ্গুলির ভাষ্য মতে শাহরুখ বলেছিলেন, আমি যখন মুম্বাইয়ে কাজের জন্য আসি তখন আমার কিছুই ছিল না। টাকা ছিল না, চমৎকার বডি ছিল না, আমি কাপুর পরিবারের কেউ নই, হৃতিক কাপুরের মতো প্রতিভাবান কেউ ছিলাম না, আমার থাকার জায়গাও ছিল না। কিন্তু আমার কাছে যেটা ছিল সেটা হলো আত্মবিশ্বাস। আমি এখন যে বাড়িতে থাকি এক সময় সেই বাড়ির পেছনে একটি পার্কের বেঞ্চে বসে আলিসান বাড়িটির দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, আমি একদিন ওই বাড়ির মালিক হবো। তিনি বলেছিলেন, এতো কিছু না থাকার মাঝেও তার যেটা ছিল সেটা হলো বিশ্বাস। তিনি জানতেন তিনি পারবেন আর তাই তিনি আজ পেরেছেন।

সৌরভ তার প্রথম টেস্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ’আমি ১৯৯৬ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাই। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ছিলেন ডেসমন্ড হেইন্স। আমি ওনাকে দূর থেকে দেখতাম আর ভাবতাম কিভাবে তার সাথে কথা বলবো। এক দিন তাকে একা পেয়ে প্রশ্ন করলাম, স্যার বেস্ট ক্রিকেটার হতে আমি কী করতে পারি।

তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমাকে চিনি না। এখনো তোমাকে খেলতে দেখিনি। তবে আমি আমার ২০ বছরের ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথাই বলব নিজের সামর্থ্যে ওপর আস্থা রাখবে। আমি যখন অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি, ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম, পাকিস্তানের ইমরান খান, ভারতের কপিল দেবের মতো শ্রেষ্ঠ খেলোয়ারদের সাথে খেলতাম তখনো আমি নিজের ওপর আস্থা রেখেছি। খেলার আগের দিন যেদিন আমি মনে মনে ভেবেছি কাল তাড়াতাড়ি আউট হতে পারি তখন আমি সত্যি পরের দিন দ্রুত আউট হয়েছি। যখন আমি আগের দিন ভেবেছি আগামীকাল হয়তো আমি ভালো খেলব, পর দিন তাই হয়েছে। নিজের ওপর আস্থা রাখাটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে।’


আরো সংবাদ



premium cement