১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেহেদি রঙে রঙিন রাজশাহী

ম্যাচ সেরা হয়েছেন মেহেদি হাসান - ছবি : নয়া দিগন্ত

মেহেদির কাজ রাঙানো। বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে নিজের বোলিং-ব্যাটিংয়ের রঙই যেন ছাড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছেন মিনিস্টার রাজশাহীর মেহেদি হাসান। দলের ব্যাটসম্যানরা যখন আসা-যাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তখন ব্যাট হাতে এসে দলকে রাঙিয়ে দিয়েছেন রানে। কিন্তু ব্যাটিংয়ে যে কাজটি করেছেন, বোলিংয়ে তার চেয়ে কি দুর্দান্তই না করলেন। ৬৫ রানে প্রথম সারির ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল রাজশাহী। ষষ্ঠ উইকেটে নুরুল হাসান সোহানের সাথে ৮৯ রানের জুটি গড়ে, রাজশাহী বিপদ কাটিয়ে উঠে মেহেদির হাফ সেঞ্চুরিতে। ২০ বলে ৩৯ রান করে সোহান সাজঘরে ফিরলেও ৩২ বলে ৫০ রান করে আউট হন মেহেদি হাসান। নান্দনিক মিরপুরের আকাশে বল উঠিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন চারটি, সাথে ছিল মাটি কামড়ানো তিন বাউন্ডারি। তাতে ১৬৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় মিনিস্টার রাজশাহী।

মারকাট ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ও মুক্তার আলি থেকে বল হাতে যেভাবে রাজশাহীকে উদ্ধার করলেন মেহেদি, তা ছিল আরো দুর্দান্ত। ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা ঢাকার শেষ ১২ বলে যখন ৩০ রান প্রয়োজন, ক্রিজে তখন সাব্বির ও অলরাউন্ডার মুক্তার। ম্যাচটা তখন পর্যন্ত রাজশাহীর দিকেই কিছুটা হেলে ছিল। কিন্তু সমস্যা ছিল বোলিং নিয়ে, নিয়মিত বোলারদের ফরহাদ রেজা ও মেহেদি হাসানের একটি করে ওভার ছিল বাকি। অন্যদের কোটা আগেই ফুল-ফিল। বুঝে-শুনে প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১২ রান দেয় ফরহাদ রেজাকেই বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। হয়তো ভেবেছিলেন অভিজ্ঞ মিডিয়াম পেসার আগের ওভারগুলোর মতোই কিছু করবেন এবং শেষ ওভারের জন্য বেশি রান থাকবে তাদের ঝুলিতে। কিন্তু বিধি বাম! ফরহাদ ১৯তম ওভারে আগের তিন ওভারের অনেকটা দ্বিগুন রান দিয়েছেন! মুক্তার আলির বেদম পেটানি ৩ ছক্কা ও ৩ সিঙ্গেলে এই ওভার থেকে বেক্সিমকো ঢাকা তোলে ২১ রান। মনে হয়েছে, ফরহাদ রেজা ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা ঢাকার বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছেন।

এরপরই শুরু আসল নাটক। শেষ ওভারে ঢাকার প্রয়োজন মাত্র ৯ রান, হাতে রয়েছে ৫টি উইকেট। অনায়াসে তারা ব্যাট চালাতেই পারেন। তার ওপর সাব্বির-মুক্তারের মতো হার্ড হিটার ক্রিজে। কিন্তু চিন্তার অবসান ঘটিয়ে দিয়েছেন মেহেদি। শেষ ওভারে মারদাঙ্গা ব্যাটসম্যানদের সামনে একজন অফস্পিনার! কিন্তু মেহেদির মনোভাব দেখে মনে হয়নি তিনি চিন্তিত কিংবা বিচলিত। লৌহমানবের মতো বল করেছেন ঢাকার ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে। স্ট্রাইকে থাকা মুক্তার আলি প্রথম তিন বলে ব্যাট ছোঁয়াতেই পারেননি। তৃতীয় বলে চার হাঁকিয়ে ফের খেলা জামিয়ে তোলেন মুক্তার। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ৫ রান। পঞ্চম বলে মেহেদি দিয়ে বসেন নো বল! তাতে ঢাকা পায় ‘ফ্রি হিট’। তখন প্রয়োজন ২ বলে ৪ রান। ফ্রি হিট বলে সংকোচহীনভাবে ব্যাট চালান মুক্তার। কিন্তু বল ব্যাটেই লাগেনি। শেষ বলে চার কিংবা ছক্কা মারলেই ঢাকার সমাধান; কিন্তু এই বল থেকে মাত্র ১ রান নিতে সক্ষম হয় ঢাকার ব্যাটসম্যান মুক্তার। আর ২ রানের জয় পেয়ে রাজশাহীর অধিনায়ক শান্ত দৌড়ে এসে ম্যাচ সেরা মেহেদিকে ধরেন জড়িয়ে। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ইয়াসির আলির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন মেহেদি। ঢাকার মুক্তারও এদিন ব্যাটে-বলে দারুণ করেছেন। ৪ ওভারে ৩ উইকেটের পাশাপাশি ১৬ করেছেন ২৭ রান। তবে মেহেদিকে মোকাবেলা করতে গিয়ে সুবিচার করতে পারেননি অলরাউন্ডার।

খেলা শেষে মেহেদি বলেন, ‘সামনের ম্যাচগুলোতেও তিনি ভালো করতে চান। দলের প্রথম জয়ে অনেক খুশি তিনি।’

প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও এক বাক্যে প্রশংসা করলেন অলরাউন্ডারকে নিয়ে। মুশফিক বলেন, ‘রাজশাহী ও মেহেদিকে অভিনন্দন। তারা যেভাবে খেলেছে..। আর আমাদের বোলাররা ঠিকভাবে শেষ করতে পারেনি। মুক্তার শেষ ওভার ছাড়া ভালো ব্যাটিং করেছে। ভুল থেকে শিখতে হবে। পরের ম্যাচে ভালোভাবে ফিরে আসতে হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement