২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্মিথের রূপকথার প্রত্যাবর্তনে জয়ের স্বপ্নে অস্ট্রেলিয়া

স্মিথের রূপকথার প্রত্যাবর্তনে জয়ের স্বপ্নে অস্ট্রেলিয়া - ছবি : সংগৃহীত

অ্যাসেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দারুণ প্রত্যাবর্তন করলেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ। আর এর মাধ্যমে প্রথম টেস্টে এখন জয়ের স্বপ্ন দেখছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে ৪৮৭ করে ঘোষণা করে। গতকাল দিনের শেষে স্বাগতিক ইংল্যান্ড বিনা উইকেট হারিয়ৈ কের ১৩ রান। জয় পেতে হলে আজ শেষ দিনে তাদের করতে হবে আরো ৩৮৫ রান। ফলে জয়ের সম্ভাবনা অস্ট্রেলিয়ারই বেশি।

স্মিথের আগে মাত্র চার অজি ক্রিকেটার অ্যাসেজের আসরে দুই ইনিংসে শতরান হাঁকিয়েছিলেন। সেই তালিকায় শীর্ষে আছেন ওয়ারেন বার্ডসলে (১৯০৯)। কিংবদন্তি আর্থার মরিস ১৯৪৭ সালে এই রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়া ১৯৯৭ সালে দুই ইনিংসেই শতরান হাঁকিয়েছিলেন। সতেরো বছর আগে এই তালিকায় নাম লেখান ম্যাথু হেডেন।
রোববার এজবাস্টনে কিংবদন্তিদের সঙ্গে একই সারিতে জায়গা করে নিলেন স্টিভ স্মিথ। লাঞ্চের পর স্টুয়ার্ড ব্রডের ডেলিভারিতে কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টেস্টে ২৫তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে তিনি করেছিলেন ১৪৪ রান। ইংল্যান্ডকে দেখলে বরাবরই ব্যাট হাতে ঝলসে ওঠেন স্মিথ। টেস্টে তাঁর পঁচিশটি শতরানের মধ্যে তাই হয়তো দশটি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে এবারের অ্যাসেজ সিরিজের লড়াই স্মিথের কাছে ছিল অনেক বেশি কঠিন। বল বিকৃতি কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এক বছর তাকে নির্বাসনদণ্ড ভোগ করতে হয়। জাতীয় দলের বাইরে শুধু নয়, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কড়া বিধানে স্মিথের হাত থেকে ব্যাট প্রায় কেড়েই নেয়া হয়েছিল।

বিশ্বকাপের আসরে জাতীয় দলে কামব্যাক করেছিলেন তিনি। তবে বিশ্বকাপে তেমন চমকপ্রদ সাফল্য না পেলেও অ্যাসেজের জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন স্মিথ। দিন পনেরো আগে থেকেই তিনি ইংল্যান্ডে একাকী প্র্যাকটিস করেন। যাতে স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস, জেমস অ্যান্ডারসনদের মতো ইংলিশ তারকা পেসারদের মোকাবিলা করতে পারেন সহজে।

প্রথম ইনিংসে কঠিন পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছিলেন স্মিথ। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এখনো অনেক বারুদ জমা রয়েছে স্মিথের ব্যাটে। দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরির মঞ্চ সেই নিরিখে অনেকটাই সহজ বলতেই হবে। কারণ, শনিবার, ম্যাচের তৃতীয় দিনেই স্মিথ ৪৬ রান করে ফেলেছিলেন। ফলে চতুর্থ দিনে অনেকটাই এগিয়ে থেকে শুরু করেছিলেন তিনি। প্রথম সেশনটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ট্রেভিস হেড ও স্টিভ স্মিথের যুগলবন্দি ভাঙতে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে ইংল্যান্ডের বোলারদের। তার উপর কাফ মাশলে চোট থাকায় বল করতে পারেননি ইংল্যান্ডের এক নম্বর পেসার জেমস অ্যান্ডারসন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্মিথ ও হেড ধীরে ধীরে বড় লিডের দিকে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যান। তারা যোগ করেন ১৩০ রান। লাঞ্চের ঠিক আগে বেন স্টোকসের বলে ট্রেভিস হেড ১১৬ বলে ৫১ রান করে কট বিহাইন্ড হন।

মধ্যাহ্ন বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ২৩১। স্মিথ ৯৮ ও ম্যাথু ওয়েড ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় সেশনে ক্রিস ওকস বোলিং শুরু করেন। প্রথম বলেই সিঙ্গলস নেন স্মিথ। তিনি ৯৯ রানে পৌঁছানোর পর এজবাস্টনের বহু দর্শক স্মিথের সেঞ্চুরি ক্যামেরাবন্দি করার জন্য ছটফট করতে থাকে। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে। স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শতরান পূর্ণ করেন স্মিথ। মাইলস্টোন স্পর্শ করতে তার লেগেছে ১৪৭টি বল। সবচেয়ে কম ইনিংসে ২৫টি সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ডে সবার উপরে আছেন ডন ব্র্যাডম্যান। তাঁর পরেই জায়গা করে নিলেন স্মিথ। তাঁর লেগেছে ১১৯টি ইনিংস। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির ২৫টি টেস্ট শতরান পূর্ণ করতে লেগেছিল ১২৭টি ইনিংস। ১৩০টি ইনিংসে শচিন টেন্ডুলকর এই মাইলস্টোন স্পর্শ করেছিলেন। সুনীল গাভাসোর ও ম্যাথু হেডেনের লেগেছিল যথাক্রমে ১৩৮ ও ১৩৯টি ইনিংস।

স্মিথের ব্যাটে ভর করেই দ্বিতীয় ইনিংসে বড় রান খাড়া করতে সমর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চম উইকেটে ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে ১২৬ রান যোগ করেন স্মিথ। তার ফলে লিড দু’শোর উপরে চলে যায়। চাপে পড়ে যান ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জো রুট। নতুন বল নেয়ার পর এই জুটি ভাঙেন ক্রিস ওকস। ২০৭ বলে ১৪২ রান করে ওকসের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন স্মিথ। তার ইনিংসে রয়েছে ১৪টি বাউন্ডারি। স্মিথ আউট হলেও ম্যাথু ওয়েড কিন্তু অসাধারণ ব্যাটিং করে লিড দ্রুত গতিতে বাড়াতে থাকেন। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে ৪০৭ রান তুলেছে। ৩৪ রানে ব্যাট করছেন অধিনায়ক টিম পেইন।


আরো সংবাদ



premium cement