০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,
`

আইপিএলে কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটার জায়গা না পাওয়া কিসের ইঙ্গিত?

চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলে ভালো পারফর্ম করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান - সংগৃহীত

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ২০২৫ মৌসুমে কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটার থাকছেন না। ২০২০ সালের পর এবারই প্রথম আইপিএলের অংশ হচ্ছেন না কোনো বাংলাদেশের ক্রিকেটার।

বাংলাদেশের ১৩ ক্রিকেটারের নাম আইপিএলের আসন্ন সিজনের নিলামের জন্য নিবন্ধিত থাকলেও, তাদের নামে কেউ ‘বিড’ করেননি বা বুলি লাগাননি।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে এই পরিস্থিতিতে আইপিএলে কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেট খেলোয়াড়ের বিড না হওয়ার বিষয়টাকে দু’দেশের সম্পর্কের সাথে কেউ কেউ জুড়ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দক্ষিণপন্থী মতাদর্শী কিছু ব্যক্তি আবার এই পুরো বিষয়ের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের যোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নাম বিড না করার বিষয়ে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড বিসিসিআই বা আইপিএল কর্তৃপক্ষ কিন্তু কোনো মন্তব্যই করেনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, এই বিষয়ের সাথে খেলোয়াড়ের দক্ষতার সম্পর্ক রয়েছে।

এদিকে দু’দেশের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের প্রসঙ্গ টেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের সাথে যা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আইপিএল দলের মালিকরা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য বিড করার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন।’

কেউ কেউ আবার একে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি জয় শাহের সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন। কিন্তু যারা এ কথা বলছেন, তারা কিসের ভিত্তিতে এমন মন্তব্য করছেন, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা করেননি।

মোস্তাফিজুর রহমান একমাত্র বাংলাদেশী ক্রিকেটার যিনি ২০২৪ সালের আইপিএলে স্থান পেয়েছিলেন। ‘চেন্নাই সুপার কিংস’-এর হয়ে নয়টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

আইপিএলের আসন্ন সিজনে নিলামের জন্য নথিভুক্ত ছিল এক হাজার ৫৭৪ জন খেলোয়াড়ের নাম। এর মধ্যে ৫৭৪ জন খেলোয়াড়কে ১০টি দল ‘শর্টলিস্ট’ করেছে। বেছে নেয়া এই ৫৭৪ জন ক্রিকেটারের তালিকায় যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০৮ জন খেলোয়াড় বিদেশী। কিন্তু সেখানে জায়গা পাননি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারই।

বিশ্বের ক্রিকেটারদের কাছে আইপিএল নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের একটা সুযোগ। যদিও পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা এখন আর আইপিএলের অংশ নন। আইপিএলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে এবং কেবলমাত্র প্রথম সিজেনেই পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা যোগ দিয়েছিলেন।

এরপরের বছর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। তখন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি অন্যান্য সম্পর্কও বেশ প্রভাবিত হয়েছে। সেই তালিকায় দু’দেশের ক্রিকেট-সংক্রান্ত সম্পর্কও রয়েছে।

মুম্বাইয়ে ২০০৮ সালে সন্ত্রাসী হামলার পর আইপিএল থেকে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের বাদ দিয়েছিল বিসিসিআই।

বিড না করার সম্ভাব্য কারণ
আইপিএলের আসন্ন মৌসুমে নিলামের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন বাংলাদেশের ১৩ জন ক্রিকেটার। এই খেলোয়াড়দের মধ্যে যে বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা শর্টলিস্ট হয়েছিলেন তারা হলেন রিশাদ হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান।

কিন্তু এই দুই খেলোয়াড়ের জন্য আইপিএলের কোনো দলকেই বিড করতে দেখা যায়নি।

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রিশাদ হোসেন ভালো পারফর্ম করেছিলেন এবং তার ঝুলিতে ছিল ১৪টি উইকেট। এই পারফরম্যান্সের পর তিনি নজর কাড়লেও, ভারতের সাথে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজে তেমন ভালো পারফর্ম করতে পারেননি। তিনটি মাত্র উইকেট নিয়েছিলেন।

আইপিএল ২০২৫-এর জন্য নিলামে হয়তো তার সেই পারফরম্যান্সই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানের জন্য আইপিএলের নিলামে বিড না হওয়ার বিষয়টা অনেকের কাছে চমকপ্রদ। ইতোমধ্যে আইপিএলের সাতটি মৌসুমে খেলেছেন তিনি। পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে পারফর্ম করেছেন।

আইপিএলের আগের মৌসুমে ‘চেন্নাই সুপারকিংস’-এর হয়ে খেলেছিলেন এবং নয় ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

আইপিএলের এবারের নিলামে তার ‘বেস প্রাইস’ ছিল দু’কোটি টাকা, কিন্তু কেউই তার জন্য বিড করেননি।

মোস্তাফিজুর রহমানের ‘ভাগ্য সহায় হয়নি’- এমনটাও মনে করছেন অনেকে। কারণ আইপিএল ২০২৫-এর নিলামের দ্বিতীয় দিনে তার নাম এসেছিল। এদিকে, ততক্ষণে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ঝুলি খালি হয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি, আইপিএল ২০২৪ চলাকালীন মাঝপথেই তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে, যা তার বিপক্ষে গিয়েছে।

আইপিএলে বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা
দীর্ঘদিন ধরেই আইপিএলের অংশ ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে গত বছর মিনি নিলামে কোনো টিম তার জন্য বিড করেনি। আইপিএলের আসন্ন সিজনে কিন্তু তার নাম শর্টলিস্টও করা হয়নি।

বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার আইপিএলের আসন্ন সিজনে স্থান না পেলেও এবারের নিলামে আধিপত্য ছিল আফগান খেলোয়াড়দের।

সফরের শুরু থেকেই আইপিএলের অংশ হিসেবে থেকেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। অন্যদিকে, ২০০৭ সালে আফগানিস্তান আইসিসির সদস্যও ছিল না।

আইপিএলের ১৮তম মৌসুমে কোনো বাংলাদেশী ক্রিকেটার ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আর এদিকে, আফগানিস্তানের সাতজন ক্রিকেটার ইতোমধ্যে ২০২৫-এর আইপিএলের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

কীসের ইঙ্গিত?
আইপিএলের আগামী মৌসুমে কোনো বাংলাদেশী খেলোয়াড় না থাকাটা ইঙ্গিত দেয় যে তারা তারা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পিছিয়ে আছে। আইপিএলের কোনো টিমে স্থান না পাওয়ার সাথে খেলোয়াড়ের দক্ষতার সম্পর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

তার মতে, প্রাথমিকভাবে খেলোয়াড়ের দক্ষতাকেই আইপিএলে প্রাধান্য দেয়া হয়।

নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলার দক্ষতা রয়েছে আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের। সেই কারণেই আইপিএলে তারা প্রাধান্য পেয়েছে।

যা বলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড
বাংলাদেশের একটি ইংরেজি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ব্যথিত। আমাদের গুণগতমান অত্যন্ত সাধারণ। আমরা যদি বিশ্ব মঞ্চে জায়গা পাই তবে আমরা তার যোগ্য এবং যদি না পাই তাহলে আমরা যোগ্য নই।’

তিনি বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের জন্য আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের বাধ্য করতে পারি না। তাদের যদি যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকে, তাহলে তাদের বেছে নেয়া হবে।’

এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে গতবারের আইপিএলের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন তিনি। তার কথায়, ‘গত বছর একটা সুযোগ পেয়েছিলাম কিন্তু তা আমরা হারিয়েছি। এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। আইপিএলে আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ছে, আর আমরা হাঁটছি উল্টা পথে।’

বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারকে ঘিরে এই মুহূর্তে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে যথেষ্ট ‘অবিশ্বাসের’ পরিবেশ রয়েছে।

গ্রেফতারের ঘটনার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার সাথে সাথে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়েছে।

তবে বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতীয় গণমাধ্যমকেও টার্গেট নিশানা করেছে। তাদের অভিযোগ, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বুধবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকি হতে পারেন এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement