খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন ভাতাভোগীরা
- মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা
- ১৭ জুলাই ২০২১, ১৬:৫২
স্বামীহারা ইঙ্গুল বড়ুয়া (৯০)। ছেলেরা খাবার না দেয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার চেয়ে খেতে হয় তাকে। এমন অসহায় অবস্থার পর বয়স্ক ভাতার বই পান তিনি। এরপর ওষুধ ও খাবার খরচের জন্য নির্ভশীল হয়ে পড়েন ভাতার টাকার ওপর।
কিছু দিন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারলেও নগদে অ্যাকাউন্ট খোলার পর আর টাকা তুলতে পারেননি। সমাজসেবা অফিসে এসে ধর্ণা দিয়েও কুলকিনারা করতে না পেরে কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরেছেন খালি হাতেই।
তারমত ৫০ থেকে ৬০জন ভাতাভোগীকে এভাবেই ফিরতে হচ্ছে প্রতি দিন। এমন ঘটনা ঘটেছে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায়।
চরপাঁচুড়িয়া গ্রামের ছিয়ারন বেগম নামে এক বয়স্ক ভাতাভোগী বলেন, ‘সামনে কোরবানির ঈদ। ছেলেরা খাতি দেয় না। ভাবছিলাম ভাতার টাকা দিয়ে কিছু খাবানি। কিন্তু টাকা তুলতি পারলাম না। এখন সাহায্য চায়েই খাতি হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছিয়ারন বেগমের দেয়া মোবাইল নাম্বার ছিল ০১৭৪৭২৩৩৭৬৭। কিন্তু তার টাকা চলে গেছে ০১৮৫৩০৯২৯৩৫ নাম্বারে। টাকা চলে যাওয়া ওই নাম্বারে কয়েক দিন ফোন দিলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ভাতাভোগীর টাকা অন্য নাম্বারে চলে গেছে। এছাড়া অনেক ভাগাভোগী আছে তাদের নাম্বার সঠিক থাকলেও তারা এখনো টাকা পাননি।
তারা জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে নগদের মাধ্যমে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উপজেলায় তার বাস্তবায়ন হয় গত মে মাস থেকে।
জানা যায়, এই উপজেলায় ২০হাজার ২৮জন ভাতাভোগীর মধ্যে ১১হাজার ৩৮জন পান বয়স্ক ভাতা, পাঁচ হাজার ৬৩৩জন পান বিধবা ভাতা ও তিন হাজার ৩৫৭জন পান অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা মাসে ৭৫০টাকা এবং বছরে ৯হাজার টাকা ভাতা পান। বয়স্করা পান মাসে ৫০০টাকা করে বছরে ৬হাজার টাকা।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে সমাজসেবা অফিসে দেখা যায়, টাকা না পাওয়া ৫০ থেকে ৬০জন অসহায় ভাতাভোগী সকাল থেকে অফিস ঘিরে বসে আছেন। অফিসের কর্মকর্তা অফিসে নেই। অফিসের অন্যান্য রুমগুলো ভেতর থেকে আটকে দেয়া। নিরুপায় হয়ে কান্নাকাটি করে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন ভাতাভোগীরা।
ওই সময় ইঙ্গুল বড়ুয়া নামে এক বৃদ্ধা কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘এক বচ্ছর ভাতা পাই না। ছেলে দুইডে ভ্যান রিকশা চালায়। খাবার পরবার দিতি পারে না। চায়ে চিন্তেই খাওয়া ছাড়া উপায় নাই।’
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জয়নুল আবেদীন জানান, মোবাইল নাম্বার দেয়ার কাজ করেছে নগদ সংশ্লিষ্টরা। তবে যাদের মোবাইল নাম্বার ভুল আছে তাদেরগুলো সংশোধন করে দিচ্ছি। এছাড়া টাকা না পাওয়া ভাতাভোগীদের তালিকা করে কৃর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা করছি এর সমাধান হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা