২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানী শহরের বিশ্রাম নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

রাজধানী শহরের বিশ্রাম নিয়ে যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। - ছবি : সংগৃহীত

যানজট ও নির্মাণ কাজে বিপর্যস্ত ঢাকা শহরকে স্বস্তি আর বিশ্রাম দিতে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন পদ্ধতিতে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। রেস্তোরাঁ ও ওষুধের দোকানের মতো জরুরি বিষয়গুলো ছাড়া অন্য বাণিজ্যিক স্থাপনা রাত ৮টার পর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাত ৮টার পর দোকানপাট শপিং মলসহ যেসব জায়গায় জরুরি সেবা দেয়া হয় না সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে রাত্রিকালীন যানজট ছাড়াও দূষণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকায় এখন রাত ১০টার পর অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। যার ফলে শহরের প্রবেশপথগুলো যানজটের পাশাপাশি শব্দ ও বায়ুদূষণ অনেক বেড়ে যায়।

ঢাকা শহরকে বিশ্রাম দেয়ার পরিকল্পনার ব্যাখ্যা করে শুক্রবার ঢাকায় এক সেমিনারে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, শহরের ব্যবস্থাপনার জন্যও সময় দরকার। করোনার সময় ঢাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি উজ্জ্বল হয়ে ওঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তখন প্রকৃতি নবউদ্যোমে জেগে উঠেছিল।

তার মতে, বিশ্বের সব শহরের একটি সময়সীমা আছে কিন্তু ঢাকার নেই। এবং তিনি জানান, এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে আলোচনাও করেন তারা।

উল্লেখ্য, ঢাকায় এক সময় রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার নিয়ম চালু ছিল। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেও এ সময়ে দোকানপাট আবার বন্ধ রাখার সংস্কৃতি চালুর অনুরোধ করা হয়।

এখন সাধারণত ঢাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় সব ধরণের দোকানপাট খোলা রাখার প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে যানজট যেমন মধ্যরাত পর্যন্ত লেগে থাকে, তেমনি দিন রাতের গড় তাপমাত্রাও কমে আসছে।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচটি বড় শহর আগামী কয়েক বছরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস যেখানে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা-বৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য লড়াই চলছে বলে এ গবেষণা জানায়।

আর শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল।

অথচ পরিবেশ অধিদফতরের জরিপে দেখা যায়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় শব্দের মানমাত্রা ১৩০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে।

শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে ওঠে এসেছে রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ ও ফার্মগেট, মতিঝিল, রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকার নাম।

যানবাহনের হর্ন, ভবনের নির্মাণকাজ, কল-কারখানা, মাইক ব্যবহার। বিশেষ করে, ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে একসাথে কয়েক শ’ গাড়ি হর্ন বাজানোকে শব্দ দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ি করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এগুলো সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার জন্য শহরের কাজকর্মের সময়সীমা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা দরকার।

বাংলাদেশ প্লানার্স ইন্সটিটিউটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকায় দিনের চেয়ে রাতে বেশি দূষণ হয়। পরিবেশের যত সূচক আছে তার সব দিক থেকেই ঢাকা পিছিয়ে আছে কারণ শহরটি প্রতিনিয়ত নিপীড়িত হচ্ছে। নিউইয়র্ক শহরের হয়তো বিশ্রাম দরকার হয় না। কারণ, পরিবেশসহ তাদের সব ব্যবস্থাপনার সূচক অত্যন্ত উঁচুতে। কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই এ শহরকে বিশ্রাম দেয়া দরকার।

নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল খান আরো বলেন, একই সাথে শহরের ওপর থেকে চাপ কমাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কোনটি কখন শুরু হবে সেটির সমন্বয় দরকার।

তিনি বলেন, ঢাকায় দিনের চেয়ে রাতেই বেশি ধূলা ছড়ায় এবং শব্দ ও বায়ু দূষণের দিক থেকে বিবেচনা করলে শহরটি ব্যাপকভাবে দূষিত। এ অবস্থায় শহরটিকে কিছুটা বিশ্রাম দেয়া দরকার। তবে এ জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনাও থাকা দরকার, যাতে দিনের কিছু বিশেষ সময়ে যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

বুয়েটের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক বলেন, আগে যখন রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধ হতো, তখন যান চলাচলসহ বেশ কিছু বিষয়ে তার একটি সুফল পাওয়া যাচ্ছিল।

তিনি বলেন, শহরকে স্বস্তি দিতে হবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। শহরমুখী মানুষের স্রোত যদি শহরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয় তাহলে সেই শহর টিকবে কীভাবে? অন্যদিকে শহরের মধ্যে জায়গা কম তাই অল্প জায়গার বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এতে শহর যেমন বিশ্রাম পাবে তেমনি নাগরিকরাও দরকারি সব সেবা পাবে কোনো কাজ ব্যাহত হওয়া ছাড়াই। তবে বিশ্রামটি যেন কার্যকর হয় এবং তাতে শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিময়তা যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

নাগরিকরা প্রয়োজনীয় সব সেবা পাবে আবার শহরের পরিবেশ স্বস্তিকর হবে, এ চিন্তা থেকেই শহরের কার্যকর বিশ্রাম নিয়ে একটা প্রজেক্ট করে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, কার্যকর বিশ্রামের জন্য কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা আরোপ করা দরকার। এখন মধ্যরাত পর্যন্ত সব খোলা না রেখে বরং খুব জরুরি নয় এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার মাধ্যমে এর শুরু হলো।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement