আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত
গাজীপুরে ৩ দিন পর কাজে যোগ দিলেন শ্রমিকরা- আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা
- ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৮
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় গতকালও চাকরিপ্রার্থী শ্রমিক ও বিভিন্ন দাবিতে বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ ঘটনায় স্থানীয় জনতা দুইজনকে আটক করে শিল্প পুলিশে সোপর্দ করেন। তবে কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত ও সার্বিক নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে পাহারা বসিয়ে ভেতরে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এই বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে ছুটি ঘোষণা করা কারখানার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। শিল্প পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
শিল্প পুলিশ আরো জানায়, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা দুইজনকে আটক করে তাদের কাছে হস্তান্তর করে। তবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টের শ্রমিকরা ১০ দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় ওই মহাসড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ওই কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন, আমাদের ১১টা দাবি ছিল। গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনসহ মালিকপক্ষ দাবিগুলো মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে গেছেন। এরপর একসপ্তাহ কারখানা বন্ধ রাখা হয়। বুধবার মেসেজ দিয়েছে পূর্বের নিয়মে কারখানা খোলা থাকবে। এতে বোঝা যায় আমাদের কোনো দাবি দাওয়া মেনে নেয়া হয়নি। গতকাল সড়ক অবরোধ করলে প্রশাসনের আশ্বাসে তুলে নেয়া হয়। আজ ১০টার মধ্যে দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা। বুধবার বিজিএমইএ ঘোষণা করেছে সব কারখানা খোলা থাকবে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) কারখানায় এসে দেখি কারখানা বন্ধ। জানার জন্য এসেছি কারখানা বন্ধ কেন। তবে এখনো মালিকপক্ষ কারখানায় আসেনি। তারা কারখানা বন্ধ করে পালিয়েছেন। তাই সব শ্রমিক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে, আশুলিয়ার গোহাইলবাড়ি মেশিনপাড় এলাকার অ্যাপারেল টুডে, ডিজাইনার ফ্যাশন লি:, জিরানী বাজার এলাকার নর্দান ফ্যাশন, সাচ্ছনসহ বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে পাহারা বসিয়ে ভেতরে কাজ চলমান রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত ও সার্বিক নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্প পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো: সারোয়ার আলম বলেন, বুধবারের তুলনায় গতকাল পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দেন। তবে হাতে গোনা কয়েকটা কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করায় সেসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, কারখানার কার্যক্রম চালু রাখতে ও শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্পপুলিশ যৌথভাবে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজীপুরে তিন দিন পর কাজে যোগ দিলেন শ্রমিকরা
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে তিন দিনব্যাপী কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিয়েছেন আন্দোলনরত বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ায় কারখানাগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এদিন বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। এ ছাড়াও বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য রোধে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীসহ শ্রমিক-মালিক ও এলাকাবাসী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, কারখানাগুলোতে নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োগে বৈষম্য দূর করে সমহারের ভিত্তিতে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল, শ্রমিকদের বেতনভাতা বৃদ্ধি, শ্রমিকদের সাথে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার এবং পুরুষ শ্রমিকদেরকে বিনা নোটিশে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে বেকার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে গত তিন দিন ধরে আন্দোলন করে বাংলাদেশ বেকার সংগঠন নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। এ সময় তারা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করে। গত তিন দিন ধরে তারা নানা অজুহাতে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, হামলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এতে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়। শ্রমিক বিক্ষোভের এ পরিস্থিতিতে জেলার শতাধিক কারখানা পর্যায়ক্রমে ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপ্রেক্ষিতে শিল্প কারখানায় বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য প্রতিরোধ করতে গত বুধবার বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় শ্রমিক-মালিক ও এলাকাবাসী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পিকেটিং ও সমাবেশ করলে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় সব শ্রমিক কাজে যোগ দিলে কারখানাগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য পুনরায় ফিরে আসে।
এ দিকে কল-কারখানায় চলমান বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য রোধে বৃহষ্পতিবারেও বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং ও সমাবেশ করেছে। তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন কল-কারখানার সামনে ও আশেপাশের এলাকায় প্রহরা বসিয়েছে। এসব টিমে নেতৃত্ব দেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ আহমেদ, বাসন থানা বিএনপির সভাপতি তানভীর সিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির, গাজীপুর মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক মো: আতাউর রহমান, বাসন থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হোসেন বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মিজানুর রহমান নয়া মণ্ডল, রফিকুল ইসলাম রাতা প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা