কোটা সংস্কার গণদাবিতে পরিণত হয়েছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:৩৯
কোটা সংস্কারের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। ন্যায্য দাবি নিয়ে আজ হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এ বিষয়ে দায় মুক্তি চায় সরকার।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ভারতের সাথে চুক্তির প্রতিবাদে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন এ আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা দিয়াশলাইয়ের দাম যদি সকালে হয় পাঁচ টাকা, বিকালে সেটির দাম হয়ে যায় ১০ টাকা। তারপরও মানুষ আন্দোলনে নামে না। আমরা সবাই বলি দাম বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারণে। কই সিন্ডিকেটের জন্য তো মিছিল কেউ করছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ভাবা দরকার, এ দেশের স্বাধীনতার পতাকা তুলেছিল তরুণরা। পাকিস্তানি সৈন্যের সামনে রক্তের নদী বয়ে গিয়েছিল, তবু কেউ সেই পতাকা নামাতে পারেনি। সেই যুবক, সেই তারুণ্য এখনো রাজপথে আছে, অথচ সবচেয়ে ন্যায্য লড়াই মুক্তির লড়াইটা এখনো গড়ে উঠছে না।’সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্ববান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আবার দাঁড়াতে হবে। সেটি ২৮ অক্টোবর হোক বা যেকোনো সময় হোক। আগে যে রকমভাবে দাঁড়িয়েছিলাম, সেভাবেই দাঁড়াতে হবে। সর্বব্যাপী যুগপৎ আন্দোলন করতে হবে আমাদের।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাধান করা যাবে না। এটা আইনগত কোনো বিষয় নয়। এটা রাষ্ট্র ও সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের একটি বিষয়। কোটা সংস্কারের যে দাবি, সেটি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। যে বিষয়ে জনগণের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, নীতিগতভাবে সেটি মেনে নেয়া দরকার। এখানে প্রয়োজনে একটি কমিশন গঠন করে সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমগ্র কোটা ব্যবস্থার একটা যৌক্তিক, গণতান্ত্রিক সংস্কার করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র। আমার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান... রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অন্য মন্ত্রীরা কোথায় কোন দেশে যাবেন, সেটি আমাদের সিদ্ধান্তের বিষয়; কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছেন, তারা (সরকার) ভারত সফরের পর চীন সফরে যাবেন। এ ক্ষেত্রে তারা টেকনোক্র্যাট অনুমতি নিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারকে চীন সফরের জন্য আগে ভারতের অনুমতি নিতে হয়েছে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে সাইফুল হক বলেন, ‘২০২৪ সালে দেশের মানুষ যে এজেন্ডাগুলো দেখতে চেয়েছিল, সেগুলোর কোনো দরকষাকষি ছাড়াই তারা ঢাকায় ফিরে এলেন। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু ছাড়াই দেশে ফিরে এসেছেন।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সীমান্তে প্রতিদিন বাংলাদেশীদের হত্যা করছে; কিন্তু এই সরকার প্রতিবাদ করছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ডেক্স অফিসারও একটা স্টেটমেন্ট দিতে সাহস পায় না। এ সরকার কী করছে? কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত আকাশে যেসব বিমান উড়ে যায়, সব ট্যাক্স নেয় মিয়ানমার। সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলের উপর দিয়ে যেসব বিমান উড়ে যায় সব ট্যাক্স নেয় ভারত। তাহলে আমাদের সার্বভৌমত্বের মানেটা কী হলো? এই সরকার নাকি চারবার ক্ষমতায়, তাহলে এসবের সমাধান করল না কেন?’
যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘অনেকেই বলে, এটা চালাক সরকার; কিন্তু এরা চালাক না, এরা হচ্ছে প্রতারক। এই যুবকরা যখন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করেছিল, তখন সরকার তা মেনে নিয়ে সংসদে বিল পাস করেছিল। একই সাথে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাস করেছিল। এই সরকার কত বড় প্রতারক, এটা দেখলেই বোঝা যায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে একের পর এক আঘাত দিয়ে বোবা বানিয়ে এ সরকার তাদের ক্ষমতায়নকে দীর্ঘায়িত করছে। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য যা করার আমরা করছি। বড় দল হিসেবে যদি বিএনপির কোনো কাজ বাদ থাকে তাহলে আমাদের সঙ্গীদের বলব, বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সাথে কথা বলুন।’
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা