আজ কবি আবুল হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আবুল হোসেনের দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১৪ সালের ২৯ জুন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।
বাংলা কবিতায় অতি আবেগ বর্জনে এবং কবিতাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে চল্লিশের দশকের প্রধান কবিদের একজন আবুল হোসেন। তাকে বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম আধুনিক কবি ভাবা হয়। পঞ্চাশের দশকে কবিতায় বাংলাদেশে যে কাব্যরুচি গড়ে উঠেছিল, সেই রুচির তিনি অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, কবিতা হচ্ছে অনুপ্রাণিত সংলাপ। তার প্রথম কবিতার বই ‘নব বসন্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে, যা ছিল আধুনিক বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই।
এরপর ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘বিরস সংলাপ’, ১৯৮২ সালে ‘হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস’, ১৯৮৫ সালে ‘দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে’, ১৯৯৭ সালে ‘এখনও সময় আছে’, ২০০০ সালে ‘আর কিসের অপেক্ষা’, ২০০৪ সালে ‘রাজকাহিনী’, ২০০৭ সালে ‘আবুল হোসেনের ব্যঙ্গ কবিতা’ ও গদ্যের বই ‘দুঃস্বপ্নের কাল’, ২০০৮ সালে ‘প্রেমের কবিতা’ ও ‘কালের খাতায়’, ২০০৯ সালে গদ্য ‘স্বপ্ন ভঙ্গের পালা’ বইগুলি প্রকাশিত হয়। তার অনুবাদ কবিতাগুলো হলো- ‘ইকবালের কবিতা’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অন্য ক্ষেতের ফসল’। ২০০০ সালে ‘আমার এই ছোট ভুবন’, ২০০৫ সালে ‘আর এক ভুবন’ নামে দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন তিনি। ‘অরণ্যের ডাক’ তার অনুবাদ উপন্যাস। ‘পার্বত্যের পথে’ নামক ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি। এ ছাড়া তার আরো অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।
কবি আবুল হোসেন ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট খুলনা জেলার তৎকালীন বাগেরহাট মহুকুমার ফকিরহাট থানার আড়ুয়াডাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস খুলনা জেলার রূপসা থানায় দেয়াড়া গ্রামে। বাবা এস এম ইসমাইল হোসেন পুলিশ বিভাগে কাজ করতেন। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল বাগেরহাটে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে তিনি নিহত হন।
কবি আবুল হোসেনের শৈশব কাটে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে, এরপর কলকাতায় ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশে। তিনি ১৯২৯ সালে ৭ বছর বয়সে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে এই স্কুল ম্যাগাজিনে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে। এরপর তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ও পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
বরেণ্য এই কবি সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। প্রথম আয়কর বিভাগে কাজ করেন, পরে রেডিওতে। তারপরে তথ্য বিভাগে। ১৯৮২ সালে যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদায় সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। একবার বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য নিযুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু কাজে যোগ দেননি। কয়েক বছর ব্যাংককে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি করেছেন। এ ছাড়া একসময় এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অবসর নেয়ার পর কিছুদিন মধুমেহ রোগের নিরাময়, প্রতিরোধ ও গবেষণাসংক্রান্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠান বারডেমের সাথে যুক্ত ছিলেন।
তিনি বাংলা একাডেমি ফেলো। বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তার স্ত্রী সাহানা হোসেন লেখক আকবর উদ্দিনের বড় মেয়ে। বিয়ে হয় ১৯৫৮ সালে। তাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।
কবি আবুল হোসেন বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে-একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা