১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সলঙ্গা গণহত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের নির্দেশ

-


১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা হাটে ব্রিটিশ পুলিশের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সিরাজগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে সলঙ্গা গণহত্যা দিবস, ২৭ জানুয়ারিকে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। এ দিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো: আসাদ উদ্দিন।
১১ জন আইনজীবী হলেন- মো: আসাদ উদ্দিন, মো: কাওসার আলী, মো: বদরুদ্দোজা বাবু, মো: গোলাম হাসনায়েন, মো: হারুনর রশিদ, মো: গোলাম কিবরিয়া, রোকসানা সুলতানা, জহিরুল হক কিসলু, ব্যারিস্টার মো: আব্দুল বাতেন শেখ, মো: হেকাম আলী শিমুল ও মো: মোরশেদুল ইসলাম।
আইনজীবী মো: আসাদ উদ্দিন বলেন, ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ছিল সলঙ্গা হাটের দিন। সেদিন যুবক আব্দুর রশিদের (যিনি বাংলাদেশ গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ‘মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ’ নামে পরিচিত) নেতৃত্বে সলঙ্গা হাটে চলতে থাকে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের প্রচারাভিযান। ‘বিলেতি পণ্য বর্জন কর, এ দেশ থেকে ব্রিটিশ হটাও’- স্লোগানে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচারাভিযান যখন তুঙ্গে তখন কংগ্রেস অফিস থেকে আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সেদিন ব্রিটিশ বেনিয়াদের নৃশংসতার এক রক্তাক্ত অধ্যায় বিরচিত হয় সলঙ্গায়।

সমগ্র ভারতবাসীর জন্য রক্তাক্ত বিদ্রোহের ঐতিহাসিক এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয় সেখানে। ৩৯ জন বৃটিশ পুলিশের রাইফেলের মুহুর্মুহু গুলিতে রক্তের বন্যা বয়ে যায় সলঙ্গার মাটিতে। পাবনার ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস, সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক এস কে সিনহা এবং পাবনা জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। সেদিনের সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে সলঙ্গার মাটি নিহত ও আহত মানুষ এবং গৃহপালিত পশুর রক্তে ভেসে যায়। নিহতদের লাশ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজগঞ্জের রহমতগঞ্জে। সেখানে তৈরি করা হয় বাংলাদেশের প্রথম ‘গণকবর’। আজও সে ‘গণকবর’ সলঙ্গার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এ ছাড়া হোসেনপুর, বাসুদেবকোলসহ সলঙ্গার বিভিন্ন জায়গায় নিহতদের কবরস্থ করা হয়। সরকারি হিসাবে এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দেখানো হয় সাড়ে চার হাজার। কিন্তু বেসরকারি তথ্য মতে এ সংখ্যা দশ সহ্রাধিক।
মো: আসাদ উদ্দিন বলেন, সলঙ্গা বিদ্রোহের বয়স এক শ’ বছর পার হয়েছে। এত বছর পরও দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য ব্যর্থতা ও লজ্জার। তাই একজন সলঙ্গাবাসী এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এ রিটটি দায়ের করা হয়।
রিটের বিবাদিরা হচ্ছেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সংস্কৃতি সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

 


আরো সংবাদ



premium cement