কেরানীগঞ্জে ভুতুড়ে বিদ্যুৎবিল আতঙ্কে গ্রাহকরা
- শামীম হাওলাদার
- ২০ মে ২০২৪, ০০:০০
- ৫০০ টাকা রিচার্জে আড়াই শ’
- ১ হাজারে ৩০০ টাকা কেটে নেয়া হয়
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল আতঙ্কে গ্রাহকরা। প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করলেই অর্ধেক টাকা হাওয়া হয়ে যায়। পোস্টপেইডে মাসিক বিল দ্বিগুণ। অভিযোগের তোয়াক্কা করছেন না কর্মকর্তারা।
সরেজমিন কেরানীগঞ্জের ঘনবসতি এলাকার মডেল টাউন আবাসিক ও ইস্পাহানি আবাসিক ছাড়াও জিনজিরা, আগানগর ও হাসনাবাদ এলাকার শতাধিক গ্রাহক ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল আতঙ্কে রয়েছে। ভুক্তভোগী প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারিরা জানান, মিটার নিউ হলে ৫০০ টাকা ঢুকালেই আড়াই শ টাকা কেটে নেয়া হয়। মডেল টাউন আবাসিকে ১২ বছর ধরে বসবাস করছেন স্কুলছাত্র দায়ান। সে জানায়, দুই মাস হলো প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন তারা। এ যাবত যতবার রিচার্জ করেছেন ততবারই টাকা হাওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ অফিস কোনো অভিযোগের তোয়াক্কা করে না। মডেল টাউন আবাসিকের এ ব্লকে মতি মিয়ার বাড়াটিয়া সিমু এ প্রতিবেদককে বলেন, আগে ছিল পোস্টপেইড মিটার। দুই রুমের বাসায় দু’টি ফ্যান ও দুটি লাইট ও একটি ফ্রিজ চলছে। কোনো মাসে দুই হাজার টাকা বিল আসতো। বাড়িওয়ালাকে বললে বলেন, তাদের কিছুই করার নেই। বিদ্যুৎ অফিসে বেশ কয়েকবার অভিযোগ নিয়ে গেলেও কারো সাথে কেউ কথা বলতে চায় না। এক মাস হলো প্রিপেইড মিটার দিয়েছে এখন ৫০০ টাকা রিচার্জ করলেই ২৫০ টাকা কেটে নেয়। ওই বাড়ির মালিক বাড়িওয়ালা মতি মিয়া বলেন, কেরানীগঞ্জে পাঁচ বছর আগেও জেনারেটর ব্যবসা ছিল জমজমাট। ঘর প্রতি দুই হাজার কিংবা ৫০০ টাকা ছিল জেনারেটর ব্যবহার বিল। আমাদের এমপি নসরুল হামিদ বিপু ভাই মন্ত্রী হওয়ার পরে কেরানীগঞ্জবাসীর কপাল খুলেছে। তাছাড়া আগে ২৪ ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ বার কারেন্ট যেতো। এখন তো কোনো লোডশেডিং নেই। তবুও বিল আতঙ্কে আছি।
তিনি বলেন, তার কয়েকটা মিটার প্রিপেইড বাকিটা পোস্টপেইড। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এর আগে তিন তলার এক ভাড়াটিয়ার সাথে তার ছেলেদের সাথে মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। এখন আবার প্রিপেইড মিটার ব্যবহাকারী ভাড়াটিয়া নানান কথা বলছে। তার মানে বিদ্যুৎ অফিস কোনো কিছু তোয়াক্কা করছেন না। আবার ভাড়াটিয়াদেরও কথা শুনতে হচ্ছে।
জিনজিরার বাসিন্দা আমিন জানান, তার অফিসে নতুন প্রিপেইড মিটার লাগানো হয়েছে। রিচার্জ করলেই অর্ধেক টাকা কেটে নেয়। এর জবাব কেউ দিচ্ছে না। সব নাকি মিটারের দোষ। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে ৫০ বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছি। এমন প্রতারণা কোনো কালে হয়নি। তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিস মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। গ্রাহকের টাকা কৌশলে ব্যক্তি পকেটে ঢুকাচ্ছে। আর কেউ কিছু বলছেন না। এছাড়া কিছু অসাধু লোক বিদ্যুৎ পরিচালনা বোর্ডে থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা তার।
ইস্পাহানির বাসিন্দা টিটু জানান, এ এলাকায় দুই বছর আগেও জেনারেটর বাণিজ্য ছিল জমজমাট। এ ব্যবসা নিয়ে সংঘর্ষ ছাড়াও হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এখন কোনো লোডশেডিং নেই। তবে প্রতি মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। কেরানীগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ নিয়ে গেলে কোনো কেউ সঠিক তথ্য তো দূরে থাক কেউ কথাও বলতে চায় না। তিনি তার পোস্টপেইড মিটারে একেক মাসে বিদ্যুৎ বিল একেক অঙ্কের। এর সমাধান কেউ দিতে চায় না।
কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিকের একাধিক বাড়িওয়ালা ও মালিক সমিতির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, এই আবাসনে বাড়িঘর করে বিপদে আছি। ভবন নির্মাণে চাঁদা, বিদ্যুৎ মিটারে চাঁদা, রাজনৈতিক প্রোগ্রামে চাঁদা দিতে হয় নিয়মিত। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। থানা পুলিশও তাদের কথা বলে। তারা বলেন, নতুন করে আবার বাড়তি ঝামেলা ও অতিরিক্ত টাকা কেটে কিংবা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। কেউ কথা শোনে না। উল্টো নানান কথা শুনিয়ে দেয়। এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার ভয় দেখায়। তাই এখন নিরব তারা।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ৪-এর জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার নয়া দিগন্তকে বলেন, পোস্টপেইড মিটারে সার্ভিস চার্জসহ যেমনি বিল দিতে হতো তেমনি প্রিপেইড মিটারেও তা। তবে প্রিপেইড মিটার নিউ হলে প্রথমবার একটু বেশি খরচ হচ্ছে গ্রাহকের। পরবর্তীতে আর কোনো সমস্যা দেখছেনা। তারপরও যদি কোনো গ্রাহকের অভিযোগ থাকে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা