বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীন সত্তা হারিয়েছে : ড. ফাহমিদা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ মে ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশ ব্যাংক তার স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পালিসি ডায়লগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মেরুদণ্ড সোজা রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। বাইরে থেকে আরোপিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
গতকাল ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির আয়োজনে ব্যাংক একীভূতকরণের সুফল নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) আয়োজিত ‘ব্যাংক একীভূতকরণ অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পক্ষে অবস্থান নেয় বেগম নেয় বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। বিপক্ষে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, আইএমএফের পরামর্শক্রমে ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে।
তবে যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় একীভূতকরণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, জোর করে ব্যাংক একীভূতকরণ টেকসই হতে পারে না। সুশাসনের অভাবে সামগ্রিক অর্থনীতিকে সাপোর্ট দেয়ার সক্ষমতা ব্যাংকিং সেক্টর হারিয়েছে। জনগণ ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা হারিয়েছে। ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারছে না। ফলে আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যাদের কারণে ব্যাংকিং খাতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। ব্যাংকের খেলাপি ঋণের সঠিক তথ্য জনগণ জানতে পারছে না।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইএমএফ ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের কারণে অনেক শর্ত জুড়ে দিয়েছে। তাদের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা। খেলাপি ঋণ এক অঙ্কে নিয়ে আসা (যদিও রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ), আর্থিক খাতের দুর্বলতা কাটানো। এ কারণেই দুর্বলের সাথে সবলের একীভূতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন ব্যাংকে আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা কোথায় টাকা রাখবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। একীভূত করার পরপরই আমানতকারীদের আস্থা উঠে যায়নি, এটা অনেক আগেই হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আস্থা ফেরাতে বা আমানতকারীদের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এখন আর্থিক খাতের সুশাসন ফেরাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ঋণ জালিয়াতি, ঋণখেলাপি, অর্থপাচার বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় কালো দাগ। ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে ব্যক্তি বিশেষের আরাম-আয়েশ, ভোগ-বিলাস দেশের অর্থনীতিতে ক্যানসারের আকার ধারণ করেছে। তবে দেশের আর্থিক খাতের অস্থিরতার দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না। নানান আইনি সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। সুশাসন ও জবাবদিহির ঘাটতি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা বজায় রেখে ব্যাংক একীভূতকরণের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়। প্রতিযোগিতায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ মাহাবুব এইচ মজুমদার, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, সাংবাদিক মো: আলমগীর হোসেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা