নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া মজবুত সংগঠন কায়েম সম্ভব নয় : অধ্যাপক ফজলুল করীম
- ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন (বাআশিফ) চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাআশিফের চাঁদপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক মো: শাহ আলমের সভাপতিত্বে, জেনারেল সেক্রেটারি মো: হারুন আর-রশিদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির পরিচালক অধ্যক্ষ ড. মো: ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম বলেন, একটি সৎ, দক্ষ, দেশপ্রেমিক, নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষকই পারেন একজন ব্যক্তিকে নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসেতে। আর শিক্ষকরা যদি এ কাজটি দায়িত্বের সাথে পালন করেন তাহলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী একজন সৎ, চরিত্রবান, আল্লাহভীরু, দেশপ্রেমিক ও দায়ত্বিশীল মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। এজন্য শিক্ষকদের নিজেদেরকে আগে নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। সুতরাং শিক্ষক যদি মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ না হন তাহলে বড় মাপের মানুষ তৈরি করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ শিক্ষক তৈরির লক্ষ্য নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া যেমন একজন ভালো মানুষ তৈরি করা সম্ভব হয় না। তেমনি নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষক ছাড়া একটি মজবুত সংগঠন কায়েম করাও সম্ভব নয়।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. মো: ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, দার্শনিক প্লেটোর মতে, ‘শিক্ষা হচ্ছে সেই শক্তি, যার দ্বারা সঠিক সময়ে আনন্দ ও বেদনার অনুভূতি জন্মায়। এটি শিক্ষার্থীর দেহে ও মনে সব সুন্দর ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে বিকশিত করে তোলে।’ দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতে, ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা দেহ-মনের সুষম এবং পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনের প্রকৃত মাধুর্য ও পরম সত্য উপলব্ধিতে সহায়তা করে।’ শিক্ষাবিদ কমেনিয়াসের মতে, ‘শিক্ষা হচ্ছে মানুষের নৈতিক উন্নতির সাহায্যে ইহলোক ও পরলোকের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি। শিক্ষার সাহায্যে মানুষ নিজেকে ও বিশ্বকে জানতে পারে।’
তিনি বলেন, শিক্ষার জন্য শিক্ষক এক অনিবার্য প্রয়োজন। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষা অচল। শিক্ষক সমাজ তাদের মেধা-মনন, চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা ও পূর্ণ মনোযোগে শিক্ষার কাজে নিয়োজিত করবে। একজন শিক্ষক হবেন নীতি ও বিচক্ষণতাবোধসম্পন্ন মানুষ। তিনি হবেন জ্ঞানবান, দায়িত্বশীল, মূল্যবোধসম্পন্ন এবং নিজ কাজ ও দায়িত্বের প্রতি সর্বদা সচেতন ও নিবেদিত। এ রকম একজন শিক্ষকের দায়বদ্ধতা থাকে প্রধানত তার বিবেকের কাছে, এরপর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে এবং সর্বোপরি সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাহলেই আমরা প্রত্যাশিত জাতি গঠন করতে পারব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাআশিফের অঞ্চল সমন্বয়ক মাস্টার আব্দুস ছাত্তর। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে জীবনধারার মান উন্নয়ন করা এবং দেশপ্রেম ও সাম্প্রদায়িক সৌহার্দে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক তৈরি করা। এজন্য শিক্ষককে নিজে বাস্তব জীবনে ভালো দিকগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। তবেই আদর্শ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাআশিফের চাঁদপুর জেলার অন্যতম উপদেষ্টা মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজি। তিনি বলেন, শিক্ষকরাই পারেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আদর্শ মানুষ তৈরি করে সুন্দর সমাজ ও জাতি গঠন করতে। শিক্ষকদেরকে মনে রাখতে হবে শুধু ছাত্রদের কল্যাণে নয়; বরং সমগ্র সমাজের তথা দেশের কল্যাণের জন্য নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যপক এটিএম ফজলুল হক। এ ছাড়াও উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের চাঁদপুর জেলা শাখার দায়িত্বশীল ও সাতটি শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা