শেরপুরে সরকারি জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করে বিক্রি আ’লীগ নেতার!
- বগুড়া অফিস
- ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
বগুড়ার শেরপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে সরকারি হাটের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এভাবে অর্ধশত দোকানঘর বিক্রি করে তিনি বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর হাটের সরকারি সম্পত্তির প্রায় ৭০ শতাংশ জমি দখল করে সম্প্রতি মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও হাটের ইজারাদার চক্রের বিরুদ্ধে। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে স্থানীয় পাঁচ-সাত জনের একটি গ্রুপ গত কয়েক বছর ধরে হাটের ইজারা নেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর হলো এই গ্রুপটি হাটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। অভিযোগ রয়েছে, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই গ্রুপটি ওই হাটটি তাদের দখলে রেখেছেন। হাটের বেশির ভাগ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করায় এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, এমনিতেই ক্রেতা ও বিক্রেতার তুলনায় হাটে ফাঁকাজায়গা খুবই কম। তার ওপর মাঝখানে এভাবে অবৈধ মাকেট নির্মাণ করে হাটের জায়গা সঙ্কুচিত করে ফেলা হয়েছে। দেখা গেছে, হাটে ধানের বাজার বসেছে সীমাবাড়ি-রানীরহাট সড়কের ওপরে। এতে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। দুধের বাজার বসেছে ইউনিয়ন পরিষদের সড়কের মাথায়। হাঁস-মুরগির হাট বসেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন এক জায়গায়। সবজি ব্যবসায়ীদের অনেকে হাটে জায়গা না পেয়ে বাজারের শেরপুর-ভবানীপুর সড়কের ওপরেই তাদের অস্থায়ী দোকান সাজিয়েছেন।
হাটের ইজারাদারদের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রউফ। তার নামেই হাটের ইজারার রসিদ ইস্যু করা হয়েছে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের চাচাতো ভাই। আবুল কালাম আজাদ দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ইজারাদার আব্দুর রউফ কিংবা অন্য যারাই মার্কেট নির্মাণ করে থাকুক না কেন, চেয়ারম্যানের সম্মতি ছাড়া এখানে ‘গাছের একটা পাতাও নড়ে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটের জায়গায় মার্কেট তুলে এসব দোকান আয়তন ভেদে প্রতিটি এক লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। এসব টাকার বেশির ভাগই মূলত ইজারাদার আব্দুর রউফের হাত ঘুরে চলে গেছে চেয়ারম্যানের পকেটে। তবে চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মার্কেট নির্মাণে তার সংশ্লিষ্টতা ও অর্থের বিনিময়ে দোকান বরাদ্দের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে ভবানীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশিলদার হাটের অবৈধ দখলের বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এসিল্যান্ড বরাবরে মুঠোফোনে সচিত্র প্রতিবেদন পাঠান। এরপর এসিল্যান্ড নিজেও সশরীরে অবৈধ এসব মার্কেট নির্মাণের ঘটনা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে থেমে গেছে প্রশাসনের তৎপরতা। তাই বিনা বাধায় দিনে-দুপুরেই চলছে নির্মাণকাজ শেষ করার পালা। হাটের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার আব্দুর রউফ প্রথমে বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে এসব মার্কেট নির্মাণ করেছেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি আবার বলেন, হাটের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছেন পাকা দোকানঘর নির্মাণের জন্য। এতে তার নিজের কোনো সংশ্লিষ্ট নেই বরং যা হয়েছে চেয়ারম্যানের নির্দেশ মতোই হয়েছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, দোকান ঘরগুলো উপজেলা পরিষদের হাটবাজার উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে করা হচ্ছে। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট ।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা: শামসুন্নাহার শিউলি জানান, এটি আমার জানামতে কোনো প্রকল্পের ভেতরে নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ার জুলহাস জানান ভবানীপুর হাটে দু’টি প্রকল্প রয়েছে একটি এলজিইডির ভবন নির্মাণ আরেকটি ওপেন শেড। টিনশেডের নতুন দোকানঘর নির্মাণের বিষয়টি সরকারি কোনো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম রেজাউল করিম বলেন, দোকানঘর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর কাজ চলছে বলে আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন জিহাদী বলেন, হাটের জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ হচ্ছে কি না আমার জানা নেই। এমন হলে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নেবো।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা প্রশাসক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন বিষয় আমার জানা নেই, আমি এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা