ফতুল্লায় সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক এলাকায় অবন্তী কালার টেক্সটাইল লিমিটেডে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে গার্মেন্ট শ্রমিকরা। সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। শ্রমিকরা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করে রাখে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশের জলকামান ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে অন্তত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্সটাইল লিমিটেডের হাজারো শ্রমিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশকে সড়কে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা গেছে। কারখানা তিন দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ।
ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি মুঠোফোনে জানান, ‘ঈদের আগে সব শ্রমিককে বোনাস দিয়েছি। শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি। আমরা আগামী বুধবারের মধ্যে সবার বেতন পরিশোধ করে দেবো।’
জানা গেছে, এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করেন।
কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজের পর কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চের বেতন বকেয়া ছিল ।
কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা পাননি। এতে ঈদের মধ্যে অর্থসঙ্কটে দিন কাটিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রমিকরা ।
ক্রোনী গ্রুপের রফতানিমুখী এ পোশাক কারখানাটিতে অন্তত সাত হাজার শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।
কারখানাটির সুইং অপারেটর মো: মাসুদ বলেন, ‘এপ্রিলের ৮ তারিখ কারখানা বন্ধের সময় মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি মালিকপক্ষ। গত আট মাস ধরে বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। বেতনের দাবিতে রাস্তায় না নামলে শ্রমিকরা বেতন পান না।’
‘ঈদের দিনও বারবার মোবাইল চেক করেছি। এই মনে হয় বেতন ঢুকল এই আশায়। কিন্তু বেতন আসেনি। আপনারা ভাবতেও পারবেন না ঈদের সময় বেতন না পেলে কিভাবে শ্রমিকদের দিন কাটে। এবার ঈদে আনন্দ ছিল না। অন্তত অর্ধেক বেতন দিলেও তো হতো,’ যোগ করেন তিনি।
ঈদের আগে বেতন না পাওয়াতে গ্রামে যেতে পারেননি বলে জানান কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া। ‘বাসের টিকিট কেটেও সিরাজগঞ্জে বাড়ি যেতে পারিনি,’ বলেন তিনি ।
‘আমাদের ক্রোনীর শ্রমিকদের ঈদ বা উৎসব নেই। প্রতি মাসে বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। বাসের টিকিট কেটেও গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। টাকা নেই, বাড়ি গিয়ে কী করব? আমাদের ঈদের আনন্দ শেষ করে দিয়েছে ক্রোনীর মালিক।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকরা মার্চের বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাজ করছে।’
অবরোধের কারণে অন্তত দুই কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। শ্রমিকদের শান্ত রাখার চেষ্টাসহ সমস্যা সমাধানে মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪-এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) সেলিম বাদশা জানান, শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া ছিল ঈদের আগে। বোনাসও একসাথে দেয়ার কথা ছিল। ঈদের আগে বোনাস দিলেও মার্চ মাসের বেতন দিতে পারেনি মালিকপক্ষ। তবে মালিকপক্ষ কথা বলে ঠিক করে নিয়েছিল শ্রমিকদের সাথে। রোববার কাজে যোগ দিয়েই তারা বেতন চায়। বেতন বৃহস্পতিবার দিতে চাচ্ছিল মালিকপক্ষ। এ নিয়ে কথা চলার মাঝেই শ্রমিকরা সড়কে নেমে পড়ে। মালিকপক্ষ পরবর্তী সময়ে মঙ্গলবার বেতন দিতে রাজি হলেও শ্রমিকরা তা মানেনি। তারা রোববারই বেতন চায়।
তিনি জানান, সড়ক অবরোধ করে থাকা শ্রমিকদের সরে যেতে বললে তারা পুলিশের উপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ উপায়ন্তর না পেয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিকও আহত হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে মালিক-শ্রমিক সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
ক্রোনী গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার ইনতিসার আহমেদ জানান, আমরা ২০ তারিখ কারখানা খুলেছি, ২২ তারিখ বেতন দেয়ার কথা ছিল। সকালে শ্রমিকরা এসে আজই বেতন চায়। পরে তারা সড়ক অবরোধ ও কারখানায় ভাঙচুর চালায়। ঈদের আগেই তাদের সাথে ২২ তারিখ বেতন দেয়া হবে বলে কথা হয়েছিল।