১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
গাজীপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর মৃত্যু

টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট করতেই বোনকে হত্যা করেন আপন ভাই

-

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে গামছা গুঁজে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে আপন ছোট ভাই ও তার বন্ধু। এ ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের ঘরে বন্ধুকে নিয়ে চুরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন নিহতের ভাই। শুক্রবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন কাপাসিয়া থানার কুলগঙ্গা এলাকার সিরাজ উদ্দীন বেপারীর ছেলে ও নিহতের ভাই কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) এবং তার বন্ধু শেরপুরের শ্রীবরদী থানার মামদা বাড়ি এলাকার আস্কর আলীর ছেলে মো: মিনাল ওরফে মিষ্টার (২১)।
পিবিআই’র এসপি মাকছুদের রহমান জানান, গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) কাপাসিয়া থানার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুর (৩৯) হাত-পা ও মুখ বাঁধা লাশ স্বামীর বাড়ির নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সিরাজ উদ্দীন বেপারী বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। নানা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নিহতের আপন ভাই কামরুজ্জামান রুবেলকে গাছা থানা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেফতার করে পিবিআই সদস্যরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বোনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ সময় লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির টাকা থেকে ৫৭ হাজার টাকা তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বন্ধু মিষ্টারকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চোরাই মোবাইল সেটের খণ্ডিতাংশ স্থানীয় কবরস্থান ব্রিজের নিচে খাল থেকে উদ্ধার করে। শুক্রবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। শাহনাজ বেগম শিমু হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার চারদিনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ শাহনাজ বেগম শিমু হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নিহত শিমুর ছোটভাই কামরুজ্জামান রুবেল স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বোনের বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা চুরি পরিকল্পনা করে রুবেল। ঘটনার দু’দিন আগে বন্ধু মিস্টারকে সাথে নিয়ে চুরির ছক কষে তারা। ঘটনার দিন বিকেলে একটি ব্যাগের মধ্যে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু, গামছা ও কাঁচি নিয়ে শ্রীপুর হয়ে রাত ৮টার দিকে বরামা ব্রিজ এলাকায় যায় রুবেল ও মিস্টার। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে তারা শিমুর বাড়ির পাশের একটি আখ ক্ষেতে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত লুকিয়ে থাকে। রাত ১২টার দিকে তারা শিমুর বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে বাসার ছাদে উঠে টিন খুলে রান্না ঘরে ঢোকে। পরে খোলা জানালা দিয়ে বাঁশের লাঠির মাধ্যমে শিমুর কক্ষের দরজার ছিটকিনি খুলে ঘরে ঢুকে। এ সময় টের পেয়ে শিমু ডাক-চিৎকার শুরু করলে প্রথমে ভয় দেখায় ও পরে শিমুর মুখ চেপে ধরে। এতেও শান্ত না হওয়ায় তারা শিমুর মুখে গামছা গুঁজে দিয়ে চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে। এ সময় দড়ি দিয়ে পিঠমোড়া করে বোনের হাত ও দুই পা বেঁধে ফেলে রুবেল। ঘটনার সময় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে বোনের নখের আঁচড়ে দুই হাতে জখম হয় রুবেল। পরে শিমুর ব্যবহৃত মোবাইল, আলমারি থেকে নগদ তিন হাজার টাকাসহ বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে বাড়ির পকেট গেট দিয়ে পালিয়ে যায় দুই বন্ধু রুবেল ও মিস্টার। পরদিন লুণ্ঠিত ওই স্বর্ণালঙ্কার দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে রুবেল। এদিন সে এ কাজে ব্যবহৃত প্লাস, চাকু ও মোবাইল সেট ভেঙ্গে ঝাজর ব্রিজের নীচে খালের পানিতে ফেলে দেয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement