অতিরঞ্জিতভাবে তৈরি হয় আইপিওর কাগজগুলো
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ৩০ মার্চ ২০২৪, ০২:২৬
তালিকাভুক্তির পর দেখা যায় অনেক কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। কোম্পানিটি যখন আইপিওর কাগজপত্র জমা দিয়েছে সেগুলো অতিরঞ্জিত করে তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএসইসির কমিশনার মো: আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, আমরা যারা এই কাজ করি, তারা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি। এ দেশের নাগরিক হিসেবে, দেশের মানুষদের ঠকানোর জন্য এ কাজ করতে পারি না। আমরা সঠিক তথ্য দিবো। সেটা আমাদের দায়িত্ব।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেক্সটাইল সেক্টরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিবদের অংশগ্রহণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক গত বৃহস্পতিবার আয়োজিত ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে ‘ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং এবং ডিসক্লোজারস: রেগুলেটরি রিকুয়ারমেন্টস’ শীর্ষক সেমিনারে বিএসইসি’র কমিশনার মো: আব্দুল হালিম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিএসই’র পরিচালক মো: আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ডিএসইর প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র করপোরেট গভর্ন্যান্স এবং ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান মো: মাসুদ খান।
আর্থিক প্রতিবেদনের অস্বচ্ছতা প্রসঙ্গে মো: আবদুল হালিম বলেন, আমরা আপনাদের ভয়ভীতি দেখাই, হেয়ারিংয়ে এ নিয়ে আসি এবং জরিমানা করি। যাতে আপনারা ঠিক হন। কিন্তু এরপরও আমরা দেখেছি অনেকের বোর্ডে সমস্যা রয়েছে, ঠিকমতো আর্থিক তথ্য প্রকাশ করে না। অন্যান্য কাজ ঠিকমতো করে না। আবার সেগুলো নিয়ে জালিয়াতি করে। এগুলো সাধারণ নিয়মিত কাজ। তিনি বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের কাছে আসেন। আমরা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করব। বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে অধ্যয়ন না করার কারণে অনেকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিপালন করতে পারছেন না। কিন্তু আমরা যারা কোম্পানির সচিব রয়েছি এবং সিএফও রয়েছি তাদের উচিত বিধি-বিধানগুলো সঠিকভাবে পড়া এবং সেগুলো যথাযথ পালন করা। যদি কোথাও সমস্যা মনে হয় তাহলে আপনারা ডিএসইর মাধ্যমে জানাবেন বা কমিশনের কাছে জানালে আমরা অবশ্যই সেটার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পরিচালক মো: আফজাল হোসেন বলেন, ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট এবং ডিসক্লোজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মালিক, বিনিয়োগকারী এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য। কারণ এটার সাথে বড় একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট হচ্ছে মূলত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টদের যেটা নিরীক্ষক প্রতিবেদন থাকে এবং সেটার সাথে কিছু সংযুক্ত তথ্য থাকে। এটার সাথে বিস্তারিত তথ্যসহ একটি ফুল ডিসক্লোজ থাকবে। যেটার মাধ্যমে একেবারে সাধারণ যে মানুষও আর্থিক প্রতিবেদনটা বুঝতে পারবে সেভাবে প্রকাশ করতে হবে। এটা হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ের মূল কথা। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এটা আরো বিস্তারিত প্রকাশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ফুল ডিসক্লোজার থেকেও আরো বেশি তথ্য এবং এনালাইসিস সহকারে প্রকাশ করতে হয়। সেই সাথে প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশনগুলো ডিসক্লোজারের একটি অংশ। তাই আর্থিক প্রতিবেদনগুলো সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রকাশ করা দরকার।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তার আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়। একটি সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানির অবস্থা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে। কারণ আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স, গভর্নেন্স, আর্থিক অবস্থার সঠিকতাসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই থাকে। তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিবেদন শুধু বিনিয়োগকারী নয়, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যও প্রয়োজন। এ ছাড়াও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্যও সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রয়োজন। একটি দক্ষ পুঁজিবাজারের অন্যতম শর্ত হলো তথ্যগুলো পরিপূর্ণভাবে সময়মতো প্রকাশ করা। দক্ষ পুঁজিবাজার করতে হলে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও সময়মতো প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা খুবই জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা