১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই

ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির ছায়া সংসদে বক্তারা
-

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট সামাল দেয়ার চেষ্টা করলে সেটি মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভের পতনের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে, ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আমাদের রিজার্ভের হিসাব অতিরঞ্জিত, যা আন্তর্জাতিক মানের নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির টার্গেট ৭.৫% ধরা হলেও তা বাস্তবতাবিবর্জিত। এ ছাড়া বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ বিশ্বের সর্বনিম্ন। বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। এবারের বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত না আসা প্রসঙ্গে পাচার না হওয়ার যে মন্তব্য করেছেন, তা সঠিক নয়। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা বাড়বে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এ ছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে কি না’ এ বিষয়ে এক ছায়া সংসদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নির্বাচনী বছরের বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের চেষ্টা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জনজীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবারের বাজেটে তেমন প্রতিফলন ঘটেনি। আয় করযোগ্যসীমার নিচে থাকা প্রত্যেক টিনধারীকে দুই হাজার টাকা কর পরিশোধের বিধান মানুষকে টিন গ্রহণ ও কর প্রদানে অনুৎসাহী করতে পারে। তিনি বলেন, টাকা ছাপিয়ে সরকারের অর্থের সঙ্কট মোকাবেলা করার চেষ্টা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। এই বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার যে বিশাল আকারের ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তা মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে। এ ছাড়া সরকার যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নেয়, তা ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে দেবে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান ডলারসঙ্কট ও আমদানিতে বিধিনিষেধ নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত করবে। আর্থিক খাতের সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারায় প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।

বিতর্ক অনুষ্ঠানে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাজেট পাসের আগে ১০ দফা সুপারিশ বিবেচনায় নেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এগুলো হলোÑ ১. আয়কর প্রদানযোগ্য নয় এমন টিনধারী ব্যক্তিদের দুই হাজার টাকা কর প্রদান ও অভ্যন্তরীণ আকাশপথে ভ্রমণকর ২০০ টাকা প্রত্যাহার করা। ২. জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কট সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩. সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বয়স্ক ভাতা, বিধাবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করা। ৪. ধনী-দরিদ্রের আয় বৈষম্য কমিয়ে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারার সুযোগ তৈরি করা। ৫. আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে পরিকল্পিত দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৬. পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আদলে অন্তত এক কোটি পরিবারকে রেশন কার্ড প্রদান করা; যাতে তারা স্বল্পমূল্যে পাক্ষিক ভিত্তিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের সুযোগ পায়। ৭. সবার জন্য শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ৮. মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৯. প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে হবে। ১০. বেকার সমস্যা নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা ও সম্ভব হলে বেকার ভাতা প্রবর্তন করা। ‘এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক বাবু কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি।


আরো সংবাদ



premium cement
ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সিদ্ধিরগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকাসহ ৮০ লাখ টাকার মালামাল লুট প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী পরীমণির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় গাজায় মানবিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : রাশিয়া পিকআপচালককে হত্যা করে রেললাইনে লাশ ফেল গেল দুর্বৃত্তরা এক মাস না যেতেই ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে! ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৭ নোয়াখালীতে মেলায় সংর্ঘষ নিহত ১ কবরস্থান থেকে বৃদ্ধার বস্তাবন্দি লাশের রহস্য উন্মোচন : পুত্রবধূ ও নাতনি গ্রেফতার মিরসরাইয়ে বজ্রপাতে কৃষকের তিন গরুর মৃত্যু

সকল