১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উৎপাদন ঘাটতি দেড় লাখ টন

মাঠে পাইকারি লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৪০০ টাকা

-


চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় লাখ টন লবণ উৎপাদন ঘাটতি হলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন বিসিকের লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার মো: জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। এবার যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে তা শেষ হওয়ার পূর্বেই নতুন বছরের লবণ উৎপাদন শুরু হবে সে কারণেই দেশে লবণের কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না বলে গতকাল বিকেলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন।
এ দিকে গতকাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে চাষিদের কাছে মজুদ লবণ বিক্রি হয়েছে ধোলাই খরচ ৪০ টাকাসহ প্রতি মণ ৪৪০ টাকা। সে হিসাবে গতকাল প্রতি মণ লবণ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ আরো ২৭০ টাকা ও ধোলাই খরচ ৪০ টাকা বাদে তাদের পকেটস্থ হয়েছে ১০০ থেকে প্রকার ভেদে ১১০ টাকা।
গতকাল বিকেলে বাঁশখালী সনুয়ার লবণ চাষি মো: বেলাল জানান, গতকাল তারা ধোলাই খরচসহ পাইকারি প্রতি মণ ৪৪০ টাকা অপরিশোধিত লবণ বিক্রি করেছেন। তার কাছে আরো প্রায় ৬০০ মণ লবণ মজুদ রয়েছে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমের (২০২২-২০২৩) শেষ প্রান্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও দেশে লবণ উৎপাদনের ৬৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। যদিও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।
এ দিকে গতকাল চট্টগ্রামের লবণ ক্রাসিং কারখানা প্রতি দুই মণ অপরিশোধিত লবণ পাইকারি ক্রয় করেছে পটিয়ায় সর্বোচ্চ ১১২০ টাকা থেকে ১১৩০ টাকা। আর মাঝির ঘাটে প্রায় একই দামে প্রতি দুই মণ লবণ সর্বোচ্চ ১১৪০ টাকা করে ক্রয় করেছে।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, গত বছর বা মৌসুমে প্রতি দুই মণ লবণ পাইকারি ক্রয় করেছে আরো অনেক কম দামে। তিনি বলেন, লবণ পাইকারি বেশি দামে ক্রয় করলেও গতকাল পর্যন্ত ক্রাস করে ওই লবণ প্রতি বস্তা ৭৫ কেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৯২০ থেকে প্রকার ভেদে ৯৫০ টাকার মধ্যে। তিনি বলেন, গত দুই বছরে খুচরা বাজারে লবণের দাম তেমন বাড়েনি। তিনি বলেন ভ্যাকুয়াম পদ্ধতির মিহি লবণও পাইকারি ৩২-৩৩ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে গতকাল খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার লবণের দাম তেমন বাড়েনি বলে খুচরা লবণ বিক্রেতারা মুদি দোকানিদের জানিয়েছেন। তারা জানান, প্রতি কেজি লবণ ভ্যাকুয়াম পদ্ধতির লবণ প্রতি কেজি গত বছরও ৩৫-৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গতকাল তারা প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি করছে। অপর দিকে ভ্যাকুয়াম পদ্ধতি ছাড়া প্রতি কেজি লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। দোকানিরা জানান, প্রায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও লবণের দাম বাড়েনি।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, মাঠে চাষিদের কাছে এখন লবণ খুব কম পরিমাণ রয়েছে। যে কারণে মাঠের পাইকারি লবণের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন চাষিরা। এক সময়ে দেশে প্রতি বছর সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ মেট্রিক টন সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করতো অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া মিস ডিলারেশনের মাধ্যমেও লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানি করতো। সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখতেন না। এ নিয়ে নয়া দিগন্তে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লবণ শিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উপরে শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করে। ফলে আমদানিকৃত লবণের মূল্য বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হয়। এতে দেশে লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে। এ ছাড়া বিসিকের উদ্যোগে নাম মাত্র সুদে গত মৌসুম থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে চাষিরা রেয়াতি সুদে ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকার কৃষি ঋণ সুবিধাও দিয়ে আসছেন। সে কারণে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানিতে চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত লবণ প্রয়োজন হয়েছে। এবারও ১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি প্রয়োজন পড়বে না বলে তিনি মনে করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement