২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মানব অত্যাচারে মরতে বসেছে ঢাকা

-


রাজধানীর বায়ু মাটি সবই এখন দূষিত। নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের নামে এক দিকে যেমন গাছ কাটা হচ্ছে অন্য দিকে জলছে জলাধার ভরাট। ফলে দূষণের সাথে লাফিয়ে বাড়ছে নগরীর তাপমাত্র। দখল দূূষণ প্লাস্টিক আর কলকারখানা বর্জ্যে এখন প্রায় মৃত রাজধানীর চারপাশের নদী। অতিরিক্ত মানুষের চাপ, পানি সঙ্কট, শব্দ ও আলো দূষণের পাশাপাশি যানজটে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এই নগরী। এভাবে করে বিশ্বে দূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে ঢাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে মানুষই পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। একের পর এক মানব অত্যাচারে মরতে বসেছে ঢাকা।
সমীক্ষা বলছে, গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এ সময়ে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজের মৃত্যু হয়েছে। এ পরিস্থিতি শুধু যে ঢাকায় তা নয়। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে অথবা আড়ালে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। এতে করে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। সে সাথে অসহনীয় তাপমাত্রা রেকর্ড ভঙ্গ করছে।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তীব্র তাপদাহের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বায়ুদূষণও রেকর্ড ভঙ্গ করছে। মানবসৃষ্ট এসব সমস্যার সমাধান না হলে আর কয়েক বছর পর একটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে ঢাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করা হয়। রাজউকের ড্যাপের তথ্য মতে, ঢাকায় সড়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জলাশয় রয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জনঘনত্ব হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় একরপ্রতি জনঘনত্ব ৩৯৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবাসকৃত এলাকার জনঘনত্ব ৫০০ জন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিকল্পিত শহরের ৬০ ভাগ জায়গায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নগরবাসীর প্রয়োজনের আলোকে অবকাঠামো গড়ে ওঠে। সেই তুলনায় দেখা যায় ৪০০ বছরের পূরণো শহর ঢাকায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ৭৬ ভাগ জায়গায়। একটি পরিকল্পিত শহরে প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১২০ জন বসবাস করে।
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার জানান, দেশে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। ধূলিকণা এবং দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা থাকার কারণে বর্তমানে অত্যধিক দূষিত বায়ুতে অবস্থিত ধূলিকণা এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়ার কারণে নগরের বায়ু প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশ দিন দিন বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। অথচ বায়ুদূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ফলে দেশের পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিভিন্ন শহর ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

সারা দেশে প্রবাহমান তীব্র তাপদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকা এক দিকে যেমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত অন্য দিকে বায়ুদূষণের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, পরিবেশ অবক্ষয় এবং নানাবিধ সম্পদগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে যেখানে আমাদের প্রচুর গাছ লাগানো প্রয়োজন সেখানে নগরীর উন্নয়নের নামে গাছ কাটা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় এবং বায়ুদূষণ কমাতে পদক্ষেপ না নিলে জনজীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
অন্য দিকে সম্প্রতি ক্যাপস আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এখন একটি উদ্বেগজনক জায়গায় আছে, অথচ রাষ্ট্র কিন্তু এখানে নির্বিকার।
সরকারকে বিভিন্ন পর্যায়ে দূষণের উৎস কমিয়ে এনে আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, বায়ুদূষণের ফলে ধীরে ধীরে আমরা অসুস্থ জাতিতে পরিণত হচ্ছি। সবাইকে নিয়মিতভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাথে একত্র হয়ে কাজ করতে হবে। আর পরিবেশ উদ্যোগের সমন্বয়ক মাহমুদা ইসলাম বলেন, বায়ুদূষণে প্রতিনিয়ত ঢাকা প্রথম দশটি শহরের মধ্যে থাকার পরেও কোনো সমন্বিত উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। উপরন্তু যেসব আইন বিধিমালা আছে সেগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে না বরং গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমরা এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল