২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেষের দিকে দৃষ্টিনন্দন পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের কাজ

-

বহুল প্রতীক্ষিত পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক জানায়, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হবে। এই এক্সপ্রেসওয়েটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে।
রাজধানীর প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে পূর্বের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্ত করবে এই সড়কটি।
পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটি ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে (বিরতিহীন সড়ক, যেখানে কোনো সিগন্যাল থাকবে না)। রাজউক সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ১২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে রাজধানীর কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪ লেন বিশিষ্ট। এর মধ্যে ৮ লেন সড়ক হবে এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ৬ লেন সড়ক হবে স্থানীয় যানবাহন চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড।
বালু নদী থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক হবে ১২ লেনের। এর মধ্যে ৬ লেন সড়ক হবে এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি ৬ লেন হবে সার্ভিস রোড। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের জন্য ১০টি বড় সেতু নির্মাণ করা হবে (২০১৫ সালের মূল প্রকল্প সেতু ছিল ৬টি)। সেতুগুলোর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮৮ কোটি টাকা।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত পুরো এলাকায় সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে সড়ক ও খালের পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ। অনেক জায়গায় সড়কের মাঝে ডিভাইডার নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাজউক। জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খাল খনন ও সংস্কার করা হচ্ছে।
রাজউক আরো জানায়, হাতিরঝিলের আদলে ১৩টি আর্চ ব্রিজ (বাঁকানো সেতু) নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২২৭ কোটি টাকা। এক্সপ্রেসওয়ের পাশের এলাকার লোকজন যাতে গাড়ি নিয়ে সার্ভিস লেন থেকে মূল সড়কে ঢুকতে পারে, সে জন্য ৫টি অ্যাটগ্রেড ইন্টার সেকশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইন্টার সেকশনের নিচ দিয়ে পাতাল সড়ক যুক্ত হবে এক্সপ্রেসওয়েতে। এ ছাড়া এ প্রকল্প এলাকায় চার কিলোমিটার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের লাইন, ২টি কালভার্ট, ১২টি ওয়াটার বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে। তা ছাড়া ২০১৫ সালের মূল প্রকল্পে উল্লেখ থাকা পথচারী-সেতুর সংখ্যা ৪টি থেকে বাড়িয়ে ১২টি, পাম্প হাউজ ১টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি, সুইসগেট ৪টি থেকে বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে।
রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পে বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে। আশা করছি আগামী ৩ মাসের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে। এ সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে। এই সড়ক নির্মাণ হলে রাজধানীর সঙ্গে পূর্বাচলের যোগাযোগ সড়ক ও আধুনিক হবে। রাস্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদানে রাজউক ও পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
প্রকল্প বিষয়ে তিনি জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্কার হচ্ছে তিনটি খাল। বর্ষা মৌসুমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিকুঞ্জ, সেনানিবাস, বারিধারা, বারিধারা ডিওএইচএস, জোয়ারসাহারা, কালা চাঁদপুর, কাওলা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ১০০ ফুট খালটি খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে শুধু কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট খাল দিয়ে বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। তাই প্রকল্পের সঙ্গে নতুন করে ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল তিনটি যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০০ ফুট সড়কটি এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১০০ ফুট খাল খনন, ১৩টি আর্চ ব্রিজ, ৫টি অ্যাটগ্রেড ইন্টার সেকশন, বিদ্যমান ৬টি ব্রিজ প্রশস্ত করা, কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১৪ লেন সড়ক উন্নয়ন, বালু নদী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত ১২ লেন উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি এডি-৮ খাল, বোয়ালিয়া খাল ও ডুমনি খাল উন্নয়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাউন্ডারি ওয়াল, ইউড্রেন নির্মাণ, জিআরপি পাইপ লাইন স্থাপন ও নিকুঞ্জ লেক উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প থেকে জানায়, কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে (কুড়িল-বালু নদী পর্যন্ত) ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আবাসন প্রকল্পের বাইরে এটিই রাজউকের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পটির সর্বপ্রথম মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট। তিন বছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৫ হাজার ২৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে আরো তিনটি খাল, সড়ক, সেতুসহ আনুষঙ্গিক বিষয় যুক্ত হওয়ায় সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৫ হাজার ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। এতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement