২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৩ বছরে মোবাইল কোর্টের ১৮১ কোটি টাকা জরিমানা আদায়

-

বিগত ৩ অর্থবছরে (২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২) মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত বিভিন্ন আইনে সারা দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দুই লাখ ৪৬ হাজার ২২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় ৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। এসব মামলায় ১৮১ কোটি ৩৯ লাখ ২৯ হাজার ৭০৪ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন মতে, এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ফলে খাদ্যে ভেজাল রোধ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধ, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেছে। উপরন্তু এতে আইনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
অবশ্য মোবাইল কোর্টের অপব্যবহার নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডিসি অফিসে মোবাইল কোর্ট এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিলে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ওই ঘটনায় আইনের অপব্যবহার ও লঙ্ঘনের প্রমাণ পায়।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে লক্ষ্মীপুরে তখনকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম সাবেক সিভিল সার্জন ডা: সালাহ উদ্দিনের সাথে কথাকাটাকাটির জের ধরে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে নিষেধ করায় শিক্ষক মোনতাজ উদ্দিনকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে শাস্তি দেয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। পরে তাকে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করা হয় শাস্তির ভয় দেখিয়ে।
২০১১ সালে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হাসেমের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক সিলেট বাণী পত্রিকার সাংবাদিক আকবর হোসেনকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে তিন মাসের জেল দেয়া হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে সংবাদমাধ্যমে ১২১ শিশুকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড দেয়ার ঘটনা প্রকাশ পায়। আদালত ওই দণ্ড বেআইনি ঘোষণা করে। হাইকোর্ট বলেন, এটা শুধু বেআইনি নয়, চূড়ান্ত অমানবিকতা।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন বিচার বিভাগের বাইরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ২০১৭ সালের ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ২০০৯ সালের আইনের ১১টি ধারা ও উপধারা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। একই সাথে, এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন এবং তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এটি ক্ষমতার পৃথককরণ নীতিরও পরিপন্থী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্ম-কমিশনের সব সদস্য প্রশাসনিক নির্বাহী। একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না। কিন্তু সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করলে তা গ্রহণ করে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে। আপিল বিভাগ সেই স্থগিতাদেশের ভিত্তিতে এখনো মোবাইল কোর্ট চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement