২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৪ জনের নামে মামলা

গাজীপুরে শ্বশুরবাড়ির প্রতারণার শিকার হয়ে প্রবাসী সর্বস্বান্ত

-

প্রবাসী জামাতার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ প্রবাসীর সম্বন্ধি ভাই আসামি রাকিব সিকদারকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। মামলার অপর আসামি প্রবাসীর স্ত্রী, শাশুড়ি ও মামাশ্বশুর পলাতক থাকার পর গত রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
মামলার বাদি ভুক্তভোগী প্রবাসী রুবেল জানান, তাদের বাড়ি গাজীপুর মহানগরের সদর থানার ২৮ নম্বর ওয়ার্ড হাড়িনাল এলাকায়। তিনি ২০০৬ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থাকেন। তার পিতা ও ছোট ভাই সোহেল রানাও দুবাই প্রবাসী। রুবেল ২০১৮ সালে দেশে ছুটিতে এসে গাজীপুর মহানগরের পূবাইল থানার বসুগাঁও এলাকার সফুর উদ্দিনের কন্যা সাথী আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের এক সপ্তাহ পর আবার দুবাই চলে যান। স্ত্রী সাথী আক্তারকেও পরবর্তীতে দুবাই নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু কলেজে লেখাপড়ার অজুহাতে সাথীর পরিবার আপাতত সাথীকে দুবাই দিতে রাজি হয়নি। ফলে রুবেল বিদেশ থেকে প্রতি মাসে সাথীর লেখাপড়া ও ভরণপোষণ বাবদ ৪০-৪৫ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অজুহাতেও সাথীর পরিবার রুবেলের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিত। শ্বশুর বাড়িতে দোকান করার জন্যও রুবেল মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান।
বিয়ের এক বছর পর রুবেল ছুটিতে দেশে আসেন। তিনি নিজের বাড়িতে না গিয়ে স্বর্ণলঙ্কারসহ মূল্যমান মালামাল নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে উঠেন। এক মাস শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করার পর আবার দুবাই চলে যান। বিদেশে অবস্থানকালে বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। পরে শ্বশুর-শাশুড়ির পরামর্শে ভিসা বাতিল করে গত বছর দেশে ফিরে আসেন এবং শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করে নিজের টাকায় গড়া ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান (মুদি দোকান) পরিচালনা করে আসছিলেন। দেশে ফেরার পরও স্ত্রী সাথীর চলাফেরা ও গতিবিধি তার সন্দেহ হচ্ছিল। পরে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন তার স্ত্রী একাধিক পুরুষের সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে রয়েছে। এমনকি শ্বশুর বাড়ির সকলের আচরণই তার কাছে প্রতারণামূলক মনে হলে তিনি বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মালামাল ও দোকানের হিসাব চান। এতে স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি, মামাশ্বশুর ও সম্বন্ধির সাথে তার বিরোধ দেখা দেয়। এমনকি এ নিয়ে একাধিকবার তাকে মারধরও করা হয়। একপর্যায়ে গত বছর ১৭ অক্টোবর রুবেলকে ডিভোর্স দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়।
এ ঘটনার পাঁচ দিন পর রুবেলকে আবার বাড়িতে খবর দিয়ে এনে সকলে দুঃখ প্রকাশ করে এবং নতুন করে পাঁচ লাখ টাকার দেনমোহরে দ্বিতীয়বার তাদের বিবাহ পড়ানো হয়। আর কখনো ভুল হবে না শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা এমন আশ্বাস দিলে রুবেল সরল বিশ্বাসে খুশি হয়ে অবশিষ্ট মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কারও তাদেরকে দিয়ে দেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ের প্রায় এক সপ্তাহ পর আবারো তাকে ডিভোর্স দিয়ে রিক্ত হস্তে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। স্থানীয় বিচার সালিসে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা থেকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মালামাল রুবেলকে ফেরত দেয়ার রায় হয়। কিন্তু রুবেলের শ্বশুরবাড়ি সামাজিক বিচারের এ রায় প্রত্যাখ্যান করে এবং রুবেলকে বাড়িতে আটকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। রুবেল এ ঘটনায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসক ও জিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে গত ২১ জানুয়ারি গাজীপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্ত্রী সাথী আক্তার, শাশুড়ি রোকসানা বেগম, মামাশ্বশুর বুলবুল সরকার ও সম্বন্ধি ভাই রাকিব সিকদারকে আসামি করা হয়।
পুলিশ রাকিব সিকদারকে গ্রেফতার করে গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। অপর দিকে গত ২৯ জানুয়ারি মামলার অন্যান্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্থন করে জামিন লাভ করেন। জামিন পেয়ে মামাশ্বশুর বুলবুল সরকার ও তার সহযোগীরা রুবেলকে মামলা দিয়ে বিদেশ যাওয়া বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত গ্রাম্য সালিসের সভাপতি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বজলুর রহমান বাছির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জুরিবোর্ড গঠন করে প্রবাসীর টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও জিনিসপত্র ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু বিবাদীরা এক দিন সময় নিয়ে পরবর্তীতে সালিসি রায় প্রত্যাখ্যান করলে আমরা রুবেলকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেই।


আরো সংবাদ



premium cement