১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে অনলাইন জুয়াড়ি চক্র নামে পাচার করছে তিন হাজার কোটি টাকা

গ্রেফতার জুয়াড়ি চক্রের নয় সদস্য : নয়া দিগন্ত -

গাজীপুরে অনলাইনে জুয়া খেলে হাজার হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে একটি চক্র। অভিযোগে মাস্টার এজেন্টসহ অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের ৯ যুবককে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। এ ঘটনার সাথে একটি ব্যাংক জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জিএমপির কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো- শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি (মৃধাবাড়ী) গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহ মৃধার ছেলে নাসির মৃধা (৩০), ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার গৌরীপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের ফরহাদ আলীর ছেলে মারুফ হাসান (২৪) ও ফরহাদ আলীর ছেলে আশিকুর রহমান ওরফে আশিক (২৭), ভালুকজান গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ওরফে রসুল (২২) ও সাবেদ আলীর ছেলে আকরাম হোসেন ওরফে রিপন (২৬), চৌদার গ্রামের জুলহাসের ছেলে কাউসার হোসেন (২৩), বড়–কা গ্রামের নুরুল ওয়াদুদের ছেলে রুবেল হোসেন (২৫), কয়ারচালা গ্রামের করিমের ছেলে আশিকুল হক (২৫) এবং গৌরিপুর পৌরসভা এলাকার আলমগীর কবিরের ছেলে মুরাদ হোসেন (২৫)। তাদেরকে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে দুপুরে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।


জিএমপির কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে জিএমপির সদর থানা পুলিশ ওই চক্রের মূল হোতা মাস্টার এজেন্ট নাসিরকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্য, ব্যবহৃত মোবাইলের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং ও মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট যাচাই করে তার কাছে রুট লেভেলের প্রায় ৭০ জন ব্যবহারকারীর তথ্য পাওয়া যায়। নাসির তাদের কাছ থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে তার ঊর্ধ্বতন সুপার এজেন্ট মারুফের কাছে দিতেন। মারুফকে গ্রেফতারের জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালানো হলে তার সাথে সাতজন জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে আরো সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল চেক করে মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ চ্যাটিং ও এমএফএস (বিকাশ/নগদ/রকেট) দেখা যায় ঊর্ধ্বতন সাইট সাব অ্যাডমিন হককে (ওয়েবসাইট নেম) একাই এজেন্ট ব্যাংকের ১৪৮টি অ্যাকাউন্টে গত নভেম্বর মাসে ২ কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে। এক মাসেই প্রায় ১৫০০টি মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে, যা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। এ ঘটনার সাথে একটি ব্যাংক জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিষয়টি স্বীকার করেছে।


তিনি গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানান, তারা মোবাইল, বিকাশ, রকেট ও ব্যাংক হিসাব এবং বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ভেলকি লাইভ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সমাজের উঠতি বয়সের যুবকদের আসক্ত করে তোলে। তারা মালয়েশিয়া/দুবাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটস অ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করে থাকে। তাদের ব্যবহৃত সার্ভারটি ভেলকি লাইভের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকাশ মালিক ওরফে রনি (বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুবাই প্রবাসী) নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আকাশ মালিক ওরফে রনি এটিকে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে বিদেশী নাম্বার ব্যবহার করে বাংলাদেশের ৫টি লেয়ারে তথ্য অ্যাডমিন, সাইট সাব অ্যাডমিন, সুপার এজেন্ট, মাস্টার এজেন্ট এবং ইউজার লেয়ারে বিভক্ত করে। প্রতিটি লেয়ার তার উপরের লেয়ারের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে।
পুলিশ কমিশনার আরো জানান, মূলত সারা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ফুটবল লিগ, টেনিস এবং চলমান বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় প্রধানত অনলাইনে বাজি ধরে জুয়া খেলা ও লেনদেন হয়। ব্যবহারকারী জয়ী হলে ডিজিটাল কয়েন ফেরত নিয়ে এর বিপরীতে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে থাকেন। আর হেরে গেলে তার পুরো ডিজিটাল কয়েনই পর্যায়ক্রমে জুয়া পরিচালনাকারীর কাছে জমা হয়ে যায়। ওই ভেলকি লাইভের ওয়েবসাইটে একজন অ্যাডমিন, ১৪ জন সাইট সাব অ্যাডমিন, ২৪০ জন সুপার এজেন্ট, দেড় হাজারের অধিক মাস্টার এজেন্ট এবং সারা দেশে দুই লক্ষাধিক ইউজার রয়েছে।


জিএমপির উপপুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন জানান, বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে এক মাসেই তিন হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, যা হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের ব্যবহৃত মোবাইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং ও মোবাইল ব্যাংকিং ওয়ালেট যাচাই করে এ ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জিএমপির সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও সিআইডি কর্তৃক মানিলন্ডারিং আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো: জিয়াউল হক ও মো: দেলোয়ার হোসেন, উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ, মো: মিজানুর রহমান, মো: হুমায়ুন কবির, মো: মাহবুব-উজ-জামান, মো: আরিফুল ইসলাম, আবু তোরাব মো: শামছুর রহমান ও মো: আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী পুলিশ কমিশনার এ কে এম আহসান হাবীব ও চৌধুরী মো: তানভীর উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement