পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষার হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিপাকে যশোরের অভিভাবকরা
- যশোর অফিস
- ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন যশোরের ৪৩ হাজার অভিভাবক। অস্বস্তিতে রয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-শিক্ষকরাও। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ পিছিয়ে দেয়ার দাবি তুলেছেন। তা না হলে অতি অল্প সময়ে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন তারা।
আগামীকাল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। করোনার পর এই প্রথম বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যশোরের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক, আট হাজার শিক্ষক এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যখন বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় এ মাসের শেষ সপ্তাহে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর। চিঠি পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্তটিকে ‘হঠকারী’ বলে উল্লেখ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা বিভাগের কয়েকজন ডিপিইও বলেন,‘আগে বৃত্তি পরীক্ষা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতো। সর্বশেষ, বৃত্তি পরীক্ষাও একই পদ্ধতিতে নেয়া হয়। কিন্তু এবার কাদের অধীনে বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। সিলেবাস কী হবে, প্রশ্ন ফি নেয়া হবে কি না সেই বিষয়েও দেয়া হয়নি কোনো নির্দেশনা। এ কারণে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।’
ডিপিইওরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে যদি বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় তাহলে প্রশ্ন করবেন কারা, কারা মডারেশন করবেন। আবার মডারেশনের পর বিজি প্রেসে কবে পাঠানো হবে, আর কবে ছাপা হবে।
শিক্ষকরা বলছেন, এখনই যদি সিলেবাস দেয়া না হয় তাহলে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ১০ শতাংশ হারে শিক্ষার্থী বাছাই করা নিয়েও। শিক্ষকরা বলছেন, কোন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, তাদের স্কুলে অনেক বেশি শিক্ষার্থী। তারা সেখান থেকে ১০ শতাংশ চূড়ান্ত করবেন কীভাবে। কারণ আগ্রহী কোনো শিক্ষার্থীকে যদি বাদ দেয়া হয় তাহলে স্থানীয়ভাবে অভিভাবকদের রোষানলে পড়বেন শিক্ষকরা। অনেক অভিভাবকের বক্তব্য, কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে এক মাসের কম সময়ে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দায়িত্বহীনতার শামিল। তারা সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে, যশোরের আট উপজেলায় এ বছর পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া ৪২ হাজার ৯৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগরে ৩ হাজার ৯১৫, কেশবপুরে ৩ হাজার ৮৬৫, চৌগাছায় ৪ হাজার ৩৬৯, ঝিকরগাছায় ৪ হাজার ৭৬৫, বাঘারপাড়ায় ৩ হাজার ৪২, মনিরামপুরে ৭ হাজার ৪২, শার্শায় ৬ হাজার ৭৫৫ ও সদর উপজেলার ৯ হাজার ১৯২ জন অধ্যয়নরত। অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব শিক্ষার্থীর ১০ শতাংশ বৃত্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবে। ফলে, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষা যদি নিতেই হয় তাহলে সময় বাড়ানো হোক। এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, তারা কেবল চিঠি পেয়েছেন। তাদেরকে শিক্ষার্থী এবং কেন্দ্রের সংখ্যা জানাতে বলা হয়েছে। এর বাইরে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
বিস্তারিত জানতে ফোন করা হয় ময়মনসিংহে প্রশ্ন প্রণয়ন করা প্রতিষ্ঠান নেপের মহাপরিচালক শাহ আলম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) উত্তম কুমার ও নেপের উপ-পরিচালক (মনিটরিং) মনিরুল হাসানকে। মহাপরিচালককে এসএমএসও করা হয়। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেননি।