বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে পেতে আরো সময় লাগবে
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর তথ্য- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, যখন দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুতের ঘাটতি ও পশ্চিমাঞ্চলে উদ্বৃত্ত হয়েছে, ঠিক তখনই ট্রান্সমিশন সিস্টেম বিকল হয়ে গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এটাই প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে বিপর্যয়ের সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন।
লিখিত বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ৪ অক্টোবর বেলা ২টার দিকে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং পশ্চিমাঞ্চলে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। এ অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের ২৩০ কেভির দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশালের দুটি সার্কিট ট্রিপ করায় পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পূর্বাঞ্চলের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায় এবং আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সির কারণেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আনস্টেবল হয়েই পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ট্রিপ করে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রিড ফেল করার পর রাত ৯টার মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। প্রথমে রাত ৯টায় ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট, এরপর আস্তে আস্তে বেড়ে তা রাত ১২টায় ১০ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় ৭ ঘণ্টার মধ্যে পূর্বাঞ্চলের পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেরেছি আমরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৪ সালের ঘটনাটি ছিল এক রকম। এ ঘটনাটি অন্যরকম। দুটি দুই রকম ঘটনা। ওইখান থেকে যা নেয়ার তার থেকে অনেক দূর পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড) অ্যাডভান্স লেভেলে চলে গেছে। পাওয়ার রিস্টোর করতে মানে কত দ্রুত আনতে পারি, বিভিন্ন উন্নত বিশ্বে কয়েক দিন আগে রেকর্ড আছে, তিন-চার দিন লেগে গেছে কিন্তু আমরা সে দিকে যাচ্ছি না। সবাই একসঙ্গে কাজ করার কারণে কিন্তু আমরা দ্রুততার সঙ্গে আনতে পেরেছি। এক ঘণ্টা পর থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছিল রিস্টোর করা। এটি একটি বড় জিনিস। অবশ্যই টেকনিক্যাল ফল্ট এখানে আছে। একদম পিন টু পিন যদি আমরা ধরতে যাই, তাহলে একটু সময় লাগবে। এ কারণে আমি দুটি কমিটি করে দিয়েছি। একটি কমিটি হলো বিদ্যুৎ বিভাগের ভেতরের লোক আরেকটি বাইরের লোক।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এ ঘটনা রোধ করার জন্য আপনারা কী করবেন- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে আমরা ঘণ্টাখানেক পর থেকে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ রিস্টোর করা শুরু করি। এটি ম্যানুয়ালি করা হয়েছে। এটির বড় জিনিস হচ্ছে আমাদের এখন অটোমেশনে যেতে হবে এবং আমরা কাজ শুরু করেছি। হয়তো আগেই করতে পারতাম। কিন্তু কোভিডের কারণে দুটি বছর পিছিয়ে গেছি। মানে এটি শেষ হতে হয়তো আরো দুই বছর লাগবে। গ্রিডকে স্মার্ট গ্রিডে পরিণত করা, এটি একটি বড় বিষয় এ মুহূর্তে।
জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ চিহ্নিত করতে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সুপারিশ পেশ করতে কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর আগে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, কোম্পানির নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
কমিটিতে থাকছেন; বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল মাঈদ, বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর প্রতিনিধি, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রতিনিধি, পিজিসিবির সদস্য মো: আমীর খসরু। সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটি গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে। কমিটি তদন্ত কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যক্তিকে কো-অপ্ট করতে পারে এবং ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইন বিভ্রাটের পর ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ওই দিন বেলা ২টার দিকে এ বিপর্যয় ঘটে। এরপর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে রাত ৯টায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলে জনজীবন স্বাভাবিক হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা