২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের ঠকাচ্ছে

কলড্রপ রোধে বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা
-

দেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু হলেও মোবাইলে কথা বলার সময় কলড্রপ কমছে না। ফলে দিন দিন গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি যেমন বাড়ছে এবং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় কলড্রপ প্রতিরোধে আগামী অক্টোবর থেকে নতুন নির্দেশনা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। মোবাইলফোনে কলড্রপ, কলড্রপ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদানে অপারেটরদের জন্য বিটিআরসির নতুন নির্দেশিকা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মোবাইল অপারেটরগুলো (কোম্পানি) গ্রাহক ঠকাচ্ছে বলেই তো ক্ষতিপূরণের প্রশ্নটা আসছে। তারা যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মানসম্মত সেবা দেয় তাহলে ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসবে না। সুতরাং কলড্রপরোধে বিটিআরসি যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা সঠিক।
এ দিকে মোবাইলফোনে কলড্রপ সংক্রান্ত তথ্যাদি এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে গতকাল সোমবার বিকেলে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় কলড্রপ সংক্রান্ত বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের তথ্য তুলে ধরা হয়। বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রধান অতিথি হিসেবে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। শুরুতে কলড্রপ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা সম্পর্কে বিশদ উপস্থাপনা করেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ। বিটিআরসির সচিব মো: নূরুল হাফিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিটিআরসি এবং মোবাইল অপারেটরদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


বিটিআরসির নতুন নির্দেশিকায় রয়েছে: ক) জবাবদিহিতা ও গ্রাহকসন্তুষ্টি নিশ্চিতে সব মোবাইল অপারেটর অভিন্ন আনস্ট্রাকচার্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিসেস ডেটা (ইউএসএসডি) কোডের (*১২১*৭৬৫#) মাধ্যমে একজন গ্রাহক পূর্ববর্তী দিন/সপ্তাহ/মাসিক অন-নেট কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে যা আগামী ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। খ) অন-নেট কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ ও সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে দৈনিক প্রথম ও দ্বিতীয় কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতি কলড্রপের জন্য ৩টি পালস (৩০ সেকেন্ড) এবং পরবর্তী তৃতীয় থেকে সপ্তম কলড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কলড্রপের জন্য চারটি পালস (৪০ সেকেন্ড ) গ্রাহককে টকটাইম ফেরত প্রদান করবে এবং একই সাথে কলড্রপের ফলে ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম পরবর্তী দিনের প্রথম কল (০০:০০ ঘণ্টা) থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে অর্থাৎ ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইমগুলো সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হওয়ার পূর্বে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হতে কল বাবদ কোনো টাকা কর্তন করা যাবে না। কলড্রপের ফলে ফেরতদেয়া টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএসএমের মাধ্যমে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে। কোনো অপারেটর চাইলে কলড্রপের দিন থেকেই কল মিনিট ফেরত প্রদান করতে পারবে। কলড্রপের ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ দিন মেয়াদ প্রযোজ্য হবে।
নতুন কলড্রপ নির্দেশিকাটি মাইলফলক উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, গ্রাহক অর্থ দিয়ে সেবা গ্রহণ করে, তাই অপারেটর কর্তৃক সেই সেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে অপারেটরদের আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যবহারকারীদের উপকারের জন্য সরকার কাজ করছে। মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য বিটিআরসি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিটিআরসি হচ্ছে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিআরসি যে পুরস্কার পেতে যাচ্ছে তা অত্যন্ত সম্মানের।
মন্ত্রী আরো বলেন, অন্য অপারেটররা যেভাবে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সেভাবেই টেলিটককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একইসাথে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এ সময় টেলিটকের এমডি উপস্থিত ছিলেন। টেলিটক কোনো অবস্থায়ই ক্ষতিপূরণ দেয়া থেকে বাদ যাবে না।
মোবাইলফোনে কলড্রপ কখনো কাম্য নয় মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে মানসম্পন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, অপারেটরদেরকে সেদিকে নজর দিতে হবে। ভয়েস কলের উন্নতির পাশাপাশি ডেটা স্পিডের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, মোবাইল অপরেটররা ব্যবসায়ে যতটা আগ্রহী, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে ততটা আগ্রহী নয়।


বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সর্বোচ্চ নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তরের মানুষ আমাদের গ্রাহক। তাদেরকে কতটুকু ভালো সেবা দিতে পারছি? প্রতিদিন গ্রাহক বাড়ছে। তবে বাসের চেয়ে যাত্রী বেশি হলে কিছু তো উপচে পড়বে। কলড্রপের বিষয়টিও তেমন। তবুও আমরা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সব অপারেটরের সাথে কথা বলে একটা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আশা করছি উন্নত সার্ভিস দিতে সক্ষম হবো। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় দশমিক ৫-১০ ভাগের বেশি কলড্রপ হতে দেয়া হবে না। আমরা কলড্রপ শূন্য শতাংশে আনতে কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ দেশের মানুষকে কলড্রপ থেকে রেহাই দিবো।
কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: এহসানুল কবীর বলেন, কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতে কলড্রপ এবং ইন্টারনেট স্পিড অন্যতম। গ্রাহকের তুলনায় বিটিএস এবং তরঙ্গ কম থাকা, লোডশেডিং, রেডিও ইকুইপমেন্ট ও অপটিক্যাল ফাইবারে বিঘœতা, নেটওয়ার্ক বুস্টার ও জ্যামারসহ আরো নানাবিধ কারণে মোবাইল ফোনে কলড্রপ হয়ে থাকে। ২০২২ সালে অপারেটরদের অনুকূলে বরাদ্দ হওয়া তরঙ্গ পুরোপুরি চালু হলে কলড্রপের হার কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
মানসম্মত সেবা প্রদানে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ২০২১ এবং ২০২২ সালে তরঙ্গ নিলাম ও টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন চালুর পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর এবং এনটিটিএন অপারেটরদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিটিএস সাইটে সক্ষমতার তুলনায় কোনো কোনো এলাকায় গ্রাহক বেশি হওয়ায় কলড্রপ বেশি হচ্ছে। সেসব জায়গায় সক্ষমতা বাড়াতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি। আপাতত অন-নেট (জিপি-জিপি, রবি-রবি,) এর কলড্রপ নির্দেশিকা প্রণয়ন হলেও বিটিআরসিতে স্থাপিত টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম চালু হলে অফ-নেট ( জিপি-রবি, রবি-বাংলালিংক) কলড্রপের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement