২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পানি প্রকল্পে দুর্নীতি : দুদকে অভিযোগ করায় হুমকির মুখে অভিযোগকারী

-

পাবনার সুজানগর পৌরসভা এলাকায় পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতঃপূূর্বে প্রধান প্রকৌশলীকে পৌরসভার পক্ষ থেকে এবং মন্ত্রণালয় থেকে অভিযুক্ত কর্মকর্তার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দিকে আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয় মন্ত্রণালয়ে ও দুদকে অভিযোগ করায় হুমকির মুখে পড়েছেন অভিযোগকারী। এ ঘটনায় অভিযোগকারী প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার হারুন অর রশিদ সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, পানি প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করার পর থেকে তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি একদল সন্ত্রাসী তার বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানের সামনে হুমকি দিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগের তদন্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (পাস অধিশাখা) ও পাবনার সাবেক জেলা প্রশাসক মো: জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা দিনব্যাপী সুজানগর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ওই প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতির সরেজমিন তদন্ত করেন। তারা এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথেও কথা বলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুজানগর পৌরসভার আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রকল্পে প্রাথমিক তদন্তে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
সুজানগর পৌরসভা সূত্র জানায়, সুজানগর পৌরসভায় আসেনিকমুক্ত সুপেয় পানি ও নিষ্কাশনব্যবস্থায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয় হলেও বিগত ছয় বছরে এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না সুজানগর পৌরবাসী। ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্পটি। বহুল আলোচিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে সুজানগর পৌরবাসীকে আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা করা না গেলেও পাঁচজন পাম্পচালক ও একজন মেকানিকের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ২০ লাখেরও বেশি টাকা পৌরসভা থেকে গচ্চা দিতে হচ্ছে প্রতি বছর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নি¤œমানের পাইপ দিয়ে পানির লাইন বসানোর কারণে পানি ছাড়ার সাথে সাথে তা ফেটে যাওয়ায় নির্মাণের পর থেকে পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ডিপ টিউবওয়েলগুলো বসানোর পর থেকে অকেজো হয়ে আছে।
প্রকল্পের অন্যান্য কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১৫ সালের জুন মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়। এ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সুজানগর পৌরসভা সূত্র জানায়। বর্তমানে প্রকল্পটি পৌরবাসীর কোনো উপকারেই আসছে না বলে জানা গেছে।
পাবনার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী বর্তমানে খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হন। পিডি নিজেই টেন্ডার আহ্বানকারী ও বিল পরিশোধকারী হওয়ায় তিনি তৎকালীন সুজানগর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী ও পছন্দের পাবনার ঠিকাদারকে দিয়ে যেনতেনভাবে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খরচ দেখান।
সুজানগরের সাবেক মেয়র আলহাজ আব্দুল ওহাব ও তোফাজ্জল হোসেন তোফা জানান, প্রকল্প কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব (পাস অধিশাখা) মো: জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আমাদের হাতে প্রাপ্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিদর্শন শাখার অফিস স্মারক-১৭৪ এবং তারিখ -১৫/৪/২০১৯ মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীকে বর্ণিত প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে বিদেশ সফরে পাঠিয়েছেন। এমনকি তাকে শুদ্ধাচার পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement