২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাওয়া কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষের

-

করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে সর্বপ্রকার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কয়েক দফা মূল্যবৃদ্ধির ফলে বড় সঙ্কটে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এই অবস্থায় পরিবার নিয়ে রাজধানীতে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। বাড়তি খরচ মেটাতে ব্যর্থ হওয়ায় খাবাবের তালিকা থেকে মাছ-গোশত সরিয়ে দিচ্ছেন। তবুও মুক্তি মিলছে না।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাদ্দাম হোসেন। মাস শেষে যে বেতন পান তাতে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে মোটামুটি চলছিল। করোনার ধাক্কাও সামলে নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু বর্তমানে খুবই খারাপ সময় পার করতে হচ্ছে তাকে। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে খিলগাঁওয়ের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। বড় ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছেন। চাকরিতে অনেক দিন ধরে বেতন বাড়ছে না। গ্রামে মায়ের দেখাশোনার জন্য প্রতি মাসে বেতন থেকে একটি পরিমাণ অর্থ পাঠাতে হয়। এর পরেও ভালো সময়ের অপেক্ষায় দিন পার করছিলেন। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে রাজধানীতে টিকে থাকা কঠিন হচ্ছে তার। বড় ছেলে মুরগির গোশত পছন্দ করলেও তার ব্যবস্থা করতে পারছেন না। আগে এক বেলা মাছ গোশত খেলেও এখন সপ্তাহে একদিন সেটি করতে কষ্ট হচ্ছে। পছন্দমতো সবজি কিনতেও পারছেন না তিনি। কম দামের পেঁপে আর আলু ব্যবহার করতে হচ্ছে প্রতি বেলার খাবারে। আগে যে চাল কিনতেন এখন তার বস্তা কিনতে হচ্ছে বাড়তি ৩০০ টাকায়। নিত্যপণ্যের দাম না কমলে গ্রামে ফিরে যাওয়ার চিন্তাও করছেন তিনি।
খিলগাঁওয়ে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শরিফুল বলেন, প্রতিটি পণ্যের যেভাবে দাম বেড়েছে এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে সংসার চালাব তা বুঝতে পারছি না। রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এমনটা চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে হবে।


গতকাল বৃহস্পতিবার সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, চালকুমড়া পিস ৫০ টাকা, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৯০ টাকা, গোল বেগুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, পেঁপের কেজি ৪০ টাকা, বরবটির কেজি ৮০ টাকা, ধুন্দলের কেজি ৬০ টাকা। বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এ ছাড়া কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এসব বাজারে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। শুকনা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা। চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৯ থেকে ৭০ টাকায়। বিরি-২৮ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায়। আগে দাম ছিল ৫৩ টাকা কেজি। নাজিরশাইল চালের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। আর পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। চিকন চাল কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা, আর মোটা চালে বেড়েছে ২ টাকা করে। তবে খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকায়। আর প্যাকেট চিনি ৯২ টাকায়। এসব বাজারে দেশী মসুরের ডালের কেজি ১৪০ টাকা। ভারতীয় মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। প্যাকেট আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। খোলা আটা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
লাল ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। আর দেশী মুরগির ডিমের ডজন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়। শিং ও পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪৬০ টাকা। শৌল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা। কৈ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায়।


আরো সংবাদ



premium cement