২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পূর্বাচলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জমি থেকে মালিককে উৎখাত চেষ্টা

বৈধ প্লট মালিকদেরও দখল দিচ্ছেন না ভূমিদস্যু সালাউদ্দিন
-

জমি বিক্রি করে ক্রেতার কাছ থেকে কয়েক ধাপে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। জমির দখলও বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্রেতার কাছে। বর্তমানে সেই জমিতে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট (এনপিআই)। শত শত শিক্ষার্থী নিয়ে ওই ভবনে চলছে কারিগরি বোর্ডের অধীনে শিক্ষাকার্যক্রম। কিন্তু জমির বিক্রীত মূল্যের সব টাকা পরিশোধ করার পরও বিক্রেতা সালাউদ্দিন জমির মালিককে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন না। উল্টো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনসহ জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন।
এ দিকে জমির ক্রেতাদ্বয় শিল্প উদ্যোক্তা দুই সহোদর ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ ও মো: আবদুল আলিম বারবার তাগিদ দিয়েও জমির রেজিস্ট্রি করে নিতে পারছেন না। যদিও জমির সব মূল্য ৯ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮২০ টাকা এরই মধ্যে তারা সালাউদ্দিনকে পরিশোধ করেছেন। জমির মূল্য বাবদ গত ১২/৩/২০২০ ইং থেকে ২৬/০১/২০২১ তারিখে ব্যাংক চেক, ব্যাংক ডিপোজিট, পে-অর্ডারের মাধ্যমে এবং নগদে তারা এই টাকা পরিশোধ করেছেন। টাকা প্রদানের সব তথ্যপ্রমাণও সংরক্ষিত রয়েছে। বেশ কয়েকবার তারিখ দিয়েও সালাউদ্দিন জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি।


এ দিকে হত্যা মামলাসহ বহু মামলার আসামি সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু খ্যাত সালাউদ্দিন এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক। কিন্তু পলাতক অবস্থায়ও তিনি পরিবারের লোকজন ও ভাড়াতে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের পাঁয়তারা করছেন। যদিও সালাউদ্দিন ও তার পরিবার ইতোমধ্যে রাজউকের বরাদ্দকৃত মসজিদের জমি দখল করে সেখানে তিনতলা ভবন নির্মাণ করে বসতিও গড়েছেন।
গত শুক্রবার পূর্বাচলের ২০ নম্বর সেক্টরে গিয়ে জানা গেল সালাউদ্দিন ও তার পরিবারের জমি দখলের ঘটনা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মসজিদের প্লটে নিজেরা তিনতলা ভবন নির্মাণ করেই শুধু ক্ষান্ত হননি, বরং সালাউদ্দিনের বাবা জহির উদ্দিন সেখানে লোকদেখানো মাদরাসা ও নামেমাত্র মসজিদ স্থাপন করে জমি দখল করেছেন। তবে ওই মসজিদ ও মাদরাসা স্থানীয়ভাবে গলাকাটা মাদরাসা নামেই পরিচিত। এলাকার কোনো একজন লোকও এই মসজিদে নামাজ পড়েন না। শুধু সালাউদ্দিনের বাবা ও মাদরাসার ছাত্ররাই এখানে নামাজ পড়েন। শুক্রবারে জুমার নামাজেও মিলেছে এর সত্যতা। মসজিদে স্থানীয়দের মধ্যে একজন মুসুল্লির দেখা মেলেনি।
এখানকার আদি নিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক আলতাফ হোসেন, গোলাম হোসেনসহ আরো অনেক বাসিন্দাই অভিযোগ করে বলেন, সালাউদ্দিন একজন দালাল ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী। হত্যাসহ বহু মামলারও সে আসামি। অনেক বৈধ প্লট মালিকের জমি সে ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল করেছে। এখন মসজিদ ও মাদরাসার নাম করে আলতাফ হোসেনের শ্বশুরের জমিও (১৪ নম্বর প্লট) সালাউদ্দিনের বাবা দখল করেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন মহিলাও অভিযোগ করেন করোনার সময়ে অনেক প্লটের মালিক দুই বছর এখানে আসেননি। এ সুযোগেই মূলত সালাউদ্দিন গংরা দখল বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেককেই তারা প্লট থেকে বেদখল দেয়ার অপচেষ্টা করছে।


ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সালাউদ্দিনের বাবার সাথে কথা বলতে গত শুক্রবার দুপুরে ২০ নম্বর সেক্টরে রাজউকের বরাদ্দকৃত মসজিদের প্লটে গিয়ে দেখা গেল মসজিদের প্লটের উত্তর পাশে রাজউকের জমিতেই তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ভবনের উপরের দিকেও আরো কাজ চলছে। সালাউদ্দিনের বাবা জহির উদ্দিন নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা রাজউক থেকে লিখিত অনুমতি নিয়েই এখানে বাড়ি করে বসবাস করছি। মসজিদের জমিতে বাড়ি কিভাবে করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মসজিদের মোতাওয়াল্লি হিসেবেই আমি এখানে বাড়ি করে পরিবার নিয়ে থাকতে পারি। এটি হাদিসেও আছে। তবে সালাউদ্দিনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তার ফোন নম্বর পাওয়া যায়নি। সালাউদ্দিনের বাবার কাছে তার ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, আমার ছেলে সালাউদ্দিন আমাকেও ছেড়ে চলে গেছে। তবে কোথায় গেছে সেটি তিনি নিজেও জানেন না।
মসজিদের জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করার বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে মুঠোফোনে তিনি জানান, পূর্বাচলের প্রতিটি সেক্টরেই মসজিদের জন্য প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো রাজউকই দেখভাল করবে। অন্য কেউ সেখানে ভবন নির্মাণ করে কিংবা অন্য কোনোভাবে দখল করার সুযোগই নেই। আমরা যেহেতু বিষয়টি জানলাম এখন অবশ্যই দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্য দিকে পূর্বাচলের ২০ নম্বর সেক্টরের ৪০১/বি রাস্তার ১৪ নম্বর প্লটের নকশা অনুমোদনসহ রাজউক থেকে বরাদ্দকৃত আরো কিছু প্লট ও জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সব টাকা নিলেও এখনো জমি রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছেন না সালাউদ্দিন।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ ও মো: আবদুল আলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা চড়া মূল্যে জমি কিনেও এখন ভুক্তভোগী। সালাউদ্দিন আমাদের নানাভাবে হেনস্তা করছে। শুধু তা-ই নয়, মসজিদ-মাদরাসার বাহানা দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জমিও দখলের পাঁয়তারা করছে। ভাড়াটে লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। কিছু মিডিয়াতে সালাউদ্দিন ভুল তথ্য দিয়ে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করিয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনিভাবেই আমরা সব কিছু মোকাবেলা করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement