২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা

ট্যানারির দূষণে ধলেশ্বরীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস

-

ট্যানারি শিল্পের লাগামহীন দূষণের কারণে ঢাকার অদূর সাভারে ধলেশ্বরী নদীর জলজ প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় আরো বলা হয়, নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা অনুমোদিত সীমা ২০০ মিলিগ্রামের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ কম রয়েছে। আবার ধাতব ক্রোমিয়ামের পরিমাণও অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষে ট্যানারি শিল্প শতভাগ কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের আওতায় না এলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশমন্ত্রী মো: শাহাব উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, মো: রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও মো: শাহীন চাকলাদার এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসে ধলেশ্বরী নদীর পানি নিয়ে গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে ট্যানারি শিল্পের দূষণের কারণে ধলেশ্বরী নদীতে অক্সিজেনের পরিমাণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। একই সাথে ধাতব ক্রোমিয়ামের পরিমাণও অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। পানিতে ধাতুর অনুমতিযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটারে ২ মিলিগ্রাম। কিন্তু ধলেশ্বরী নদীতে ক্রোমিয়ামের পরিমাণ প্রতি লিটারে ৫ থেকে ৭ মিলিগ্রাম। তিনি আরো বলেন, লাগামহীন দূষণের কারণে ধলেশ্বরী নদীর মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এই নদীর অবস্থাও বুড়িগঙ্গা নদীর মতো হবে।


বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটি উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি বলেন, ট্যানারি শিল্পের সব ইউনিটকে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের আওতায় আনার ব্যবস্থা নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে তিন থেকে ছয় মাস সময় দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। এই সুপারিশ কার্যকর না হলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ট্যানারি শিল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ নেবে। এর আগে ধলেশ্বরী নদী বাঁচাতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন সুপারিশ করা হলেও কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবারই তারা (শিল্প মন্ত্রণালয়) অজুহাত দেয় যে ট্যানারি শিল্পের সাথে বিপুল কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় জড়িত এবং এই শিল্প বন্ধ হলে খারাপ প্রভাব পড়বে। অথচ ব্যাপক দূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে পরিবেশ আইনের বিধানমতে ইটভাটার মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ু দূষণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের বিধান কার্যকর এবং সরকারি সব অবকাঠামো নির্মাণে ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ‘ব্লক-ইটের’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া বৈঠকে সরকার কক্সবাজারের জঙ্গল খুনিয়া পালং সংরক্ষিত বনের একটি অংশ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীদের নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া নির্মল বায়ু আইন বাস্তবায়নের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement