২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাইড শেয়ারিং নিয়ে বিড়ম্বনায় সাধারণ বাইকাররা

নির্দিষ্ট পোশাক ব্যবহারের দাবি
-

ব্যবসায়ী ওহিদুল ইসলাম এলিফ্যান্ট রোডের দোকানে যাবেন বলে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছেন। একটু দেরি হয়ে যাওয়ায় তিনি তড়িঘড়ি করছিলেন। কিছু দূর যেতেই প্যান্ট-শার্ট পরা ভদ্রলোক এক হাত উঁচু করে তার সামনে দাঁড়ালেন। কোনো কিছু না শুনেই বলে বসলেন, ‘উত্তরা যাব। দ্রুত চলেন’, বলেই এক পা উঁচু করে ওহিদুলের পেছনের সিটে বসার চেষ্টা করলেন। ওহিদুল বললেন, আমি উত্তরা যাব না, আপনি কে? এ কথা শুনে ভদ্রলোক বলে বসলেন, ‘আরে ভাই আপনারাও কি সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মতো হয়েছেন। জায়গা পছন্দ না হলে যেতে চান না।’ ওহিদুল বললেন, না জেনে হুট করে রেগে গেলেন। আমি রাইড শেয়ার করি না। পথ ছাড়েন বলেই চলে গেলেন। শুধু ওহিদুল নয়, প্রতিদিন এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে রাজধানীর সাধারণ বাইকারদের। পেছনে যাত্রী না থাকলেই রাইড শেয়ারিংয়ের বাইক ভেবে চলন্ত অবস্থায় হাত উঁচু করে দাঁড় করানো হচ্ছে তাদের। এরপর এখানে যাবেন, সেখানে যাবেন, নানা কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন যাত্রীরা। এমন বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মতো রাইড শেয়ারের বাইকারদের পোশাক চালু করা জরুরি বলে মনে করছেন সাধারণ বাইকাররা।
মাতুয়াইলের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিদিনই ব্যবসায়িক কাজে মোটরসাইকেলে চলাফেরা করেন। তিনি বলেন, রাইড শেয়ারিং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। রাইড শেয়ারিংয়ের কারণে অনেক মানুষ বাসের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু রাইড শেয়ারিং যে অর্থে ব্যবহার হচ্ছে সেটি ঠিক নয়। তার মতে, রাইড শেয়ারিং মানে আমি যেখানে যাচ্ছি, সুযোগ থাকলে অ্যাপের মাধ্যমে কাউকে নিয়ে যাব। তবে সেটা আমার ইচ্ছা ও প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করবে। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছেÑ রাইড শেয়ারিংয়ের আওতাভুক্ত মোটরসাইকেল চালকদের বেশির ভাগই সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো, ফুল টাইম রাস্তায় থাকেন, মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, অনেকে অ্যাপ ব্যবহারও করেন না। এ অবস্থায় রাইড শেয়ারিং আর থাকল কোথায়? যদি তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশার পদ্ধতিতেই চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে তাদের মতো নির্ধারিত পোশাক দেয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন তিনি।
ফেসবুকভিত্তিক মোটরসাইকেল কমিউনিটি বিডি বাইকার্স ক্লাবের (অ্যাডমিন) রবি কিরণ বলেন, বর্তমানে দেখা যায় রাইড শেয়ারিংয়ের আওতাভুক্ত মোটরসাইকেলগুলো অ্যাপ ছাড়া চলছে। চালকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকছেন। এতে যাত্রীরাও বিভ্রান্ত হন। অনেক সময় যাত্রীরা যেকোনো মোটরসাইকেল দেখলেই মনে করেন এটা বুঝি পাঠাও। তারা ডাক দেন, সেই মোটরসাইকেল চালককে ঠিক যেভাবে সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশাচালককে ডাকা হয়। রাইড শেয়ারিংয়ের আওতাভুক্ত মোটরসাইকেল চালকদের যদি নির্ধারিত পোশাক থাকত, তাহলে এসব ঘটনা সহজে এড়ানো যেত।
একাধিক মোটরবাইক চালক জানান, একসময়ের সিএনজি অটোরিকশা-লেগুনা চালক, বাসের হেল্পার, এখন চালায় পাঠাওয়ের বাইক। তারা সেসময় যাত্রীদের সাথে যে রুক্ষ আচরণ করত, সেটা পাঠাও-উবার যাত্রীদের সাথেও করে। এতে যাত্রীরা মনে করেন, মোটরসাইকেল চালক মাত্রই এমন দুর্ব্যবহার করেন। যেটা সাধারণ শৌখিন মোটরসাইকেল চালক বা যারা মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার করেন না, তাদের জন্য মানহানিকর ও অপমানজনক। যদি নির্ধারিত পোশাক থাকত, তাহলে বিষয়টি আসত না। এ দিকে অদক্ষ চালকদের হাতে জিম্মি দেশের রাইড শেয়ার। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রতিদিন বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা, হুমকিতে যাত্রীনিরাপত্তা। তবে চালক অদক্ষ হলেও বেশির ভাগের হাতেই রয়েছে বৈধ লাইসেন্স। তাই বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- বিআরটিএর কার্যক্রম নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এ ব্যাপারে উবার জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ থাকায় কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি। তবে ‘সহজ’ ডটকম কল সেন্টারের কর্মী ফারজানা বলেন, আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করে যারা রাইড শেয়ার করছেন, তারা নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার পথে কাউকে নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে চালকদের জন্য নির্ধারিত ড্রেস কোড করার পরিকল্পনা আমাদের নেই। অ্যাপের বাইরে যারা যাত্রী পরিবহন করেন, তারা নিজ পরিবহন দিয়ে করেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বলার নেই।


আরো সংবাদ



premium cement