২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

উত্তরাঞ্চলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গোখাদ্যের দাম

৬ দফা দাবিতে প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ঘেরাও
-

গোখাদ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় মহা সঙ্কটে পড়েছেন রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের খামারিরা। এক দিকে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি শোধ দিতে পারছেন না। অন্য দিকে বিনিয়োগ টেকানোর চিন্তা। এই অবস্থায় খাদ্যের দাম কমানো, আসছে বাজেটে গোখাদ্যে ভর্তুকি প্রদান, দুধের দাম সমন্বয়, নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে রাজপথে নেমেছে রংপুরের গবাদিপশু খামারিরা। বুধবার দুপুরে তারা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ এবং প্রাণিসম্পদ অফিস ঘেরাও করেছে। তাদের অভিযোগ, পুষ্টির চাহিদা পূরণকারী খামারিরা পথে বসলেও কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। দাবি আদায় না হলে তারা ধারাবাহিক আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। খামারি, খাদ্যবিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভাসহ ১ হাজার ২৩১টি ইউনিয়নে ছোট-বড় গরুর খামার রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। প্রাকৃতিক ঘাস ছাড়াও দোকান থেকে কেনা গোখাদ্য দিয়ে গরুর লালনপালন করেন খামারিরা। প্রতি বছর প্রধানতম টার্গেট থাকে কোরবানির ঈদ। কিন্তু সেই গোখাদ্যের দাম আকাশছোঁয়া। প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে দাম। গত তিন মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ।
গোখাদ্যের দোকান সূত্র জানিয়েছে, গত তিন মাস আগের ৩১-৩২ টাকা কেজির গমের মোটা ভুসি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। জারার ৩২-৩৩ টাকা কেজির চিকন ভুসির দর বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকায়। ৫০ কেজি ওজনের সয়াবিন মিলের বস্তা ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়াও ২০ থেকে ২২ টাকার কেজির ভুট্টা পাউডার এখন ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, ২০ থেকে ২২ টাকার চালের খুদ ৩৩ থেকে ৩৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে। মাসকলাইয়ের ভুসি কেজি প্রতি ২৮-২৯ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়। ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজির খৈল বেড়ে কেজিপ্রতি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর ২৫ কেজি বস্তার মিক্সড ফিড ৭৮০ টাকা থেকে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ থেকে ৯৯০ টাকায়। এ ছাড়াও ফিডের দামও বস্তাপ্রতি ১ হাজার থেকে বেড়ে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিটাগুড়ের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা।
সূত্র জানায়, রংপুরসেহ উত্তরাঞ্চলে ছোট-বড় ও মাঝারি মিলে গবাদিপশুর খামার আছে এক লাখেরও বেশি। এই খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলেও গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খামার টেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ছয় দফা দাবিতে বুধবার দুপুরে রংপুর মহানগরীতে গাভীর গায়ে ও কাঁধে খামার বাঁচানোর বিভিন্ন লেখা ব্যানার নিয়ে কয়েক শ’ নারী ও পুরুষ খামারি বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও করেন খামারিরা। তারা বলেন, ভুসি, খৈল, ফিড, চিটা গুরুসহ সব খাদ্যের দাম বেড়েছে দুই থেকে আড়াইগুণ। জীবন-জীবিকা বাঁচাতেই তারা রাস্তায় নেমেছেন। আন্দোলনকারী সংগঠন রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দাবি না মানলে লাগাতর আন্দোলনে যাবেন তারা। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসিফুল ইসলাম আসিফ জানান, আমাদের এখন ডু অর ডাই অবস্থা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। খামারিদের পিঠ এখন দেয়ালে। খাদ্যের দাম বাড়লেও দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ, ব্র্যাক, মিল্কভিটাসহ নিজেরা দুধের দাম বাড়ালেও খামার থেকে দুধ ক্রয়ের দাম বাড়ায়নি। এটা তামাশা করা হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ঘাস লতাপাতা খাওয়ানোর কথা বললেও সরকারিভাবে চারণভূমি লিজ দিতে ভূমিকা নেয় না। ফলে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই আবার বেকার হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই রংপুরের আট হাজার খামারির মধ্যে চার হাজার বন্ধ হয়ে গেছে। যদি আমাদের দাবি মানা না হয় তা হলে আমরা লাগাতার আন্দোলনে যাব। অনশনসহ রাজপথে থাকব। তা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন বলেন, এই সমস্যা শুধু রংপুরের সমস্যা না। এটা জাতীয় সমস্যা। আমরা ব্যাংক মহাজনী ঋণসহ নানাভাবে অর্থ লগ্নি করে খামার করছি। অনেক শিক্ষিত বেকার খামার করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। কিন্তু গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব কিছুই স্থবির হয়ে গেছে। যদি সরকার গোখাদ্যের দাম না কমায়, বাজেটে গোখাদ্যে ভর্তুকি না দেয়, দুধের দাম যদি সমন্বয় না করা হয়, নি¤œমানের গুঁড়াদুধ আমদানি বন্ধ করা না হয়, তাহলে খামারগুলো টিকবে না। এতে দেশে দুধ ও গোশত উৎপাদন কমে যাবে। সরকার যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কালক্ষেপণ করে তাহলে অনেক বড় মাশুল দিতে হবে আমাদের। আমাদের লাগাতার আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় নেই। এটা ভাবতে হবে। এ দিকে ঘণ্টাখানেক ঘেরাও থাকার পর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালক ওলিউর রহমান এসে দাবিগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দিলে খামারিরা চলে যান। তাদের দাবির সাথে এক মত প্রকাশ করলেও ঘাস জাতীয় খাদ্যের ওপর জোড় দিয়েছেন তিনি।
তিনি এ সময় বলেন, আপনারা আপনাদের দাবিগুলো স্মারকলিপি আকারে দেন। আমি সরকারের ওপর মহলে পৌঁছে দিবো। তিনি বলেন, গোখাদ্য আসলে ঘাস জাতীয় খাদ্যের ওপরই জোর দিতে হবে। সেটা নিশ্চিত করতে খামারিদের সরকারিভাবে গো চারণভূমি লিজের বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলেও জানান এ সময়। খামারি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলেছে, উত্তরের ষোল জেলায় প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়, যা দেশের প্রায় সব দুধসংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো এই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করে থাকেন। খামারগুলো টিকে না থাকলে তৈরি হবে সঙ্কট।
গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির তালিকা
খাদ্যের নাম তিন মাস আগের দাম বর্তমান দাম গমের ভুসি মোটা প্রতি কেজি ৩১-৩২ টাকা ৪০-৫০ টাকা গমের ভুসি চিকন প্রতি কেজি ৩২-৩৩ টাকা ৫২-৫৫ টাকা মাসকালাইয়ের ভুসি ২৮-২৯ টাকা ৪২-৪৩ টাকা ভুট্টা পাউডার ২০-২২ টাকা ৩৮-৪০ টাকা ৫০ কেজির সয়াবিন মিলের বস্তা ১৭৫০-১৯০০ ৩১৫০-৩২৫০ টাকা ২৫ কেজির মিক্স ফিড বস্তা ৭৮০ ৯৮০-৯৯০ টাকা ফিডের বস্তা ১০০০ টাকা ১২০০-১৩০০ টাকা খৈল ২৫-৩০ টাকা ৪৫-৫০ টাকা চালের খুদ ২০-২২ টাকা ৩৩-৩৪ টাকা ।


আরো সংবাদ



premium cement
শাস্তি কমিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনে উদ্বেগ টিআইবির যখন দলকে আর সহযোগিতা করতে পারবো না তখন অবসরে যাব : মেসি ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪

সকল