২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রতিনিয়ত খোয়া যাচ্ছে মোবাইল পণ্য ও নগদ টাকা

প্রতিনিয়ত খোয়া যাচ্ছে মোবাইল পণ্য ও নগদ টাকা
-

রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানাধীন কোনাপাড়া বাজার এলাকায় ভিক্ষুকচক্রের নামে গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর এক সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়ত এই সিন্ডিকেটের হাতে সাধারণ মানুষ খোয়াচ্ছেন তাদের মূল্যবান মোবাইল, দোকান থেকে কেনা পণ্য ও নগদ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের হাতে সাধারণ মানুষ সর্বস্ব খোয়ালেও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেকটাই নির্বিকার রয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এলাকাবাসী বলছেন, এই সিন্ডিকেটের মধ্যে পঙ্গু, ভিক্ষুক, নারীসহ রয়েছে বেশ কিছু মাদকসেবী। তাদের কর্মকাণ্ডে বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত থাকতে হয় অজানা আতঙ্কের মধ্যে। তাদের দাবি, দ্রুত এই চক্রকে চিহ্নিত করে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা। নতুবা এই সিন্ডিকেটের উৎপাতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। ঘটতে পারে আরো বড় ধরনের ঘটনাও।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার এই ‘ভিক্ষুক’ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে মোবাইল, নগদ টাকা ও বাসার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র খুইয়েছেন মৌসুমী আক্তার নামের এক গৃহিণী। তিনি এ ব্যাপারে ডেমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ঘটনার পর স্থানীয় কোনাপাড়া ফাঁড়িকে ওয়্যারলেসে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। শুধু ওই নারীই নন, এর আগেও একইভাবে অনেকেই বাজার করতে এসে খুইয়েছেন দোকান থেকে ক্রয় করা মালামাল, মোবাইল ও নগদ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইল মুসলিমনগর এলাকার (রফিকুল ইসলাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন) স্বপ্নচূড়া ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মৌসুমী আক্তার গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মাকে সাথে নিয়ে কোনাপাড়ার কাঁচাবাজারে যান। এই বাজারের পশ্চিম পাশটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার আওতাধীন। আর পূর্বপাশ হচ্ছে ডেমরা থানার অধীনে। পূর্ব পাশের মিনিস্টার ফ্রিজের শো রুমের দক্ষিণ পাশ থেকে তারা কাঁচাবাজার এবং মাছ কেনেন। এ সময় সেখানে বসে থাকা এক পা -কাটা ভিক্ষুককে দেখে মৌসুমী আক্তার কিছু সাহায্য করার লক্ষ্য ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেন। এরপর তিনি সেখান থেকে কিছু সময় পর রাস্তার পশ্চিম পাশের মজিবর পান স্টোরের সামনে থাকা একটি আমের দোকানে গিয়ে আম কেনার জন্য দরদাম করতে থাকেন। এরপরই তিনি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখেন মোবাইল ও নগদ টাকাসহ থাকা ভ্যানিটি ব্যাগটি নেই। তিনি ঘটনাটি আশপাশের লোকজনকে জানালে তারা এ ব্যাপারে কেউ কিছু দেখেননি বলে জানান। এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শে পরবর্তীতে তিনি তার স্বামীকে সাথে নিয়ে সরাসরি চলে যান স্টাফ রোডের ডেমরা থানায়।
ডেমরা থানার ডিউটি অফিসার সাদ্দাম অভিযোগ শুনে তাদেরকে জানান, যেহেতু মোবাইল এবং নগদ টাকা খোয়া গেছে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে, নতুবা পরে আসতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঘণ্টাখানেক থানায় অপেক্ষা করার পর ওয়্যারলেস অপারেটর রফিক এসে জানান, শুধু মোবাইল খোয়া গেছে বলা হলে জিডি করা যাবে। টাকার কথা উল্লেখ করা যাবে না। আর যদি টাকার কথা উল্লেখ করতে হয় তাহলে মামলা করতে হবে। এরপর ওই দম্পতি মামলা না করে আপাতত জিডি করে বাড়িতে ফিরে যান।
মোবাইল ও টাকা খোয়ানো ওই নারী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি আমার মাসহ বাজার করার সময় একটি পা নেই ভিক্ষুককে দেখে মায়া লাগে। আমি তাকে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিয়ে রাস্তার ওপারে আমের দোকানে যাই। এরপরই দেখতে পাই আমার ব্যাগটি নেই। এখন কোথা থেকে খোয়া গেছে তা বলতে পারছি না। পরবর্তীতে আমি আমার স্বামীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ওই ভিক্ষুককে সেখানে আর খুঁজেও পাইনি। আমার ধারণা এই চোরচক্রের সাথে ওই ভিক্ষুকেরও হাত থাকতে পারে। তবে আমার ব্যাগ যখন খোয়া যায় তার আগে এক নারী আমার গায়ের ওপর এসে হালকা ধাক্কা দেয়। তখন আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। মোবাইলটি আমি ১৮ হাজার ৯০০ টাকায় কিনেছিলাম এক বছর আগে। আর বাজার করার জন্য নগদ ২৫০০-৩০০০ টাকা ছিল।
আমদোকানিসহ অন্যরা বিষয়টি জানার পর এ প্রতিবেদককে বলেন, এই বাজারে কিন্তু অনেক বড় বড় চোর আছে। প্রতিদিন কারো না কারো মোবাইল, টাকা চুরি হচ্ছে। একদিন আগেই পাশের ব্যাংক থেকে এক লোক সাত লাখ টাকা নিয়ে বের হওয়ার পরই সেটি খোয়া যায়। পরে আমার দোকানের সামনে দাঁড়ানো লোকটিকে দেখছেন সে গিয়ে ওই চোরকে ধরে ফেলে। সেখানে দাঁড়ানো একজন ব্যক্তি জানান, গতকালই আমার ৩০ হাজার টাকার একটি মোবাইল এই বাজার থেকে চোরেরা মুহূর্তে নিয়ে গেছে।
ডেমরা থানায় গিয়ে আমি একটি জিডি করেছি। পুলিশ বলেছে ট্রাকিং করে দেখবে। অপর একজন নারী বলেন, বাজারের পেছনে দিনে রাতে গাঞ্জুটিদের আসর বসে প্রতিদিন। তাদেরকে ফাঁড়ির পুলিশও চেনে? কিন্তু তাদের কিছু বলে না। এর জন্য আমরাও আর কিছু বলি না। তবে সারাক্ষণ চোরদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি। কারণ প্রায়ই কাস্টমার দোকান থেকে মালামাল কিনে রাখার পর গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় গাড়ি থেকেও মালপত্র গায়েব হয়ে যাচ্ছে। চোর সিন্ডিকেট গ্রুপে নারী-পুরুষ সদস্য ছাড়াও মাদকসেবী ও ভিক্ষুক রয়েছে বলে তারা জানান।


আরো সংবাদ



premium cement