২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকা-কক্সবাজার হাইওয়ে সড়ক দাপাচ্ছে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি

৮০ কিলোমিটারেরও বেশি গতি
-

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস এবং শ্যামলী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়ি। এসব কোম্পানিতে ভালো মানের গাড়িও রয়েছে। অথচ কোম্পানির কোন কোন গাড়ি দিনে-রাতে চলন্ত অবস্থায় মহাসড়কে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের ঝক্কি ঝামেলায় পড়ছে। এর ফলে এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের প্রতিনিয়ত থাকতে হচ্ছে আতঙ্কের মধ্যে। এর মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ যে গতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা রয়েছে, তার চেয়েও বেশি গতিতে চালকরা গাড়ি চালানোর কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। এতে প্রায় ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। গত সপ্তাহে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী বাসের যাত্রীদের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে পাওয়া যায় এসব তথ্য।
শুধু শ্যামলি পরিবহন বা শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস নয়, একই ধরনের লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি দিয়ে আরো বেশ কয়েকটি বাস কোম্পানির একাধিক গাড়ি এ রুটে চলছে বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব অনিয়ম দেখার কথা যাদের, মহাসড়কের কোথাও কাউকে তাদের মনিটরিং দেখা যায় না বলে ভুক্তভোগীরা জানান। তবে এসব রুটে মিয়ানমার হয়ে ইয়াবা পাচারকারী চক্রের পাঠানো মাদক দেদারসে ঢাকায় আসছে। এমন গোপন তথ্যে প্রতিদিন ইয়াবা সিন্ডিকেট ধরতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযান চলছে।
১৪ মে দিবাগত রাত ২টা। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া শ্যামলী পরিবহনের (আব্দুল্লাহপুর-কক্সবাজার) বাসটি কুমিল্লার হোটেল তাজমহলের সামনের সড়কে দাঁড়ানো। এ সময় বাসের কয়েকজন যাত্রীকে দেখা যায় বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। বাসের চালক, হেলপার মিলে ইঞ্জিনের হুক খুলে সেটি রাস্তার উপর রেখে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ইঞ্জিন দেখছেন। এরপর তারা আবার নেমে গাড়ির বাইরে থেকে চাকার নিচ দিয়ে ভেতরে সমস্যা কোথায় তা দেখার চেষ্টা করছেন।
বাসের দরজার সামনে দাঁড়ানো ওই বাসের কয়েকজন যাত্রীর কাছে কি সমস্যা হয়েছে- জানতে চাইলে তারা বলেন, গাড়ির গিয়ার লিভার কাজ করছে না বলে চালক বলছেন। সেটি ঠিক করার চেষ্টা চলছে।
বেশ কিছু কোম্পানির বাস রয়েছে, যেগুলো হাইওয়ে সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। সেগুলোও বড় বড় কোম্পানির নামে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলাচল করছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। রোববার রাতে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী নিয়ে ভোরের দিকে ঢাকায় পৌঁছে। ওই গাড়ির যাত্রী নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ির বাসিন্দা নুর ইসলাম নাহিদ নয়া দিগন্তকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্যামলী পরিবহনের বাসগুলো হাইওয়ে সড়কে বেপরোয়াভাবে চলছে। এর মধ্যে শ্যামলী পরিবহন ও শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের মালিক সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। দিনে রাতে তাদের গাড়িগুলো প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। কার আগে কে যাবে। তিনি ওই দিন যে গাড়িতে উঠেছেন সেই গাড়ির বর্ণনা দিয়ে বলেন, হাইওয়েতে যে ধরনের গাড়ি চলাচল করার কথা সেগুলো বাইরে থেকে ঝকঝক করলেও ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। সিট এবড়োথেবড়ো। দরজা লক্কড়-ঝক্কড়। চলন্ত অবস্থায় জানালার গ্লাসের শব্দে যাত্রীরা অস্থির থাকে। এর মধ্যে চালকের নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানো দেখে আমাদের রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। তিনি ওই গাড়ি চালকের বিষয়ে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতির আগ পর্যন্ত কয়েক দফা প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। এরপরও গাড়ির চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। এটা দেখে আমি আরো আতঙ্কিত হয়ে যাই। পরে গুগল ম্যাপে দেখতে পাই, ঘণ্টায় গাড়ির গতি ৮০ কিলোমিটার থাকার কথা থাকলেও সেটি কখনো কখনো ৯৩-৯৭ পর্যন্ত গতিতে চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজে উঠার আগেই একটি যাত্রীবাহী বাস আইল্যান্ডের উপর উঠে আছে। এই গাড়িতে কয়জন হতাহত হয়েছে তা জানতে পারিনি।
এসব প্রসঙ্গে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের মালিক রাকেশ বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। এর আগে ঢাকাগামী তাদের বাসটি চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজে উঠার আগেই আইন-শৃংখলা বাহিনী সিগন্যাল দিয়ে থামায়। পরে পুলিশ বাসটির ভেতরে তল্লাশি চালায়। একপর্যায়ে এক যাত্রীর কাঁঠাল দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পরে পুলিশ ওই যাত্রীকে নামিয়ে আনলেও বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ার নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ চলে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement