২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়েও রাজস্ব ফাঁকি

গাজীপুরে ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া নামজারি বা খারিজ মিলে না

-

নামজারি জমাভাগ বা খারিজের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি সাড়ে ১১ শ’ টাকা হলেও গাজীপুর ভূমি অফিসগুলোতে মোটা অঙ্কের উৎকোচ ছাড়া খারিজ মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খারিজ থেকে খারিজ বা একটি জোত থেকে আরেকটি নতুন জোত খুলতে কোনো জটিলতা বা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বরং সংশ্লিষ্ট জোতের মালিক যে প্রক্রিয়ায় জোতটি খুলেছিলেন জমি হস্তান্তরের পর নতুন মালিকের নামে নামজারি আরো সহজ প্রক্রিয়ায় হওয়ার কথা। কিন্তু ঘুষ না দিলে নানা অজুহাতে এই সহজ প্রক্রিয়াটিকেও জটিল করে তুলেন ভূমি কর্মকর্তারা। অপর দিকে মালিকানার ধারাবাহিকতা ও রেকর্ডভুক্ত মালিকের ওয়ারিশদের হিস্যা নিয়ে কোনো আপত্তি বা জটিলতা না থাকা সত্ত্বেও কেবল ঘুষযুক্ত আবেদন না হওয়ায় অসংখ্য নামজারির আবেদন নামঞ্জুর হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
টঙ্গী পৌর ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা জাকির হোসেন অভিযোগ করে জানান, তিনি ১১২৯/২০২১ নম্বর নথিমূলে টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল ভূমি অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে যথাযথভাবে নামজারির আবেদন করেন। পরে টঙ্গী পৌর ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় দলিলপত্রের মূল কপি প্রদর্শন করেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, তার আবেদনটি নামঞ্জুর হয়েছে। এরপর তিনি ৬৬০২/২০-২১ নম্বর নথিমূলে দ্বিতীয় বার আবেদন করেন। এবারো অজ্ঞাত কারণে তার নামজারির আবেদন নামঞ্জুর হয়। অবশেষে তৃতীয় বার ৯০২০/২০-২১ নম্বর নথিমূলে ওই একই কাগজপত্রমূলে আবারো আবেদন করেন এবং হয়রানি থেকে বাঁচতে টঙ্গী পৌর ভূমি অফিসের একজন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে বাধ্য হন। এভাবে তার সর্বশেষ আবেদনটি মঞ্জুর হয়। যার নতুন জোত নম্বর ১৮১১০।
সাতাইশ এলাকার সোহেল রহমান জানান, তিনি কাকিল সাতাইশ মৌজায় সাড়ে ১৩ শতাংশ জমির নামজারির জন্য আবেদন করেন। উপযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই তার আবেদন নামঞ্জুর হলে তিনি দ্বিতীয়বার আবেদন করেন (নথি নং- ২৯৮৬/২০-২১)। তার এ আবেদনও অজ্ঞাত কারণে নামঞ্জুর হয়। তৃতীয় বার আবেদন করলে (নথি নং-৯৯৪/২০-২১) তার কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। তিনি প্রত্যাশিত ঘুষ না দেয়ায় তাকে ১৩ শতাংশ জমি থেকে মাত্র সাড়ে চার শতাংশের খারজি দেয়া হয়। যার জোত নম্বর ৮৩৩৫। এরপর অবশিষ্ট জমির জন্য তিনি চতুর্থবার আবেদন করেন (নথি নং-৯৫৬৩/২০-২১)। এবারো প্রত্যাশিত অঙ্কের চেয়ে কম ঘুষ দেয়ায় তাকে আরো চার শতাংশের খারিজ দেয়া হয়। যার জোত নম্বর ৮৪৪৩। তিনি পিতার কাছ থেকে হেবা দলিলে মালিক হয়েছেন মোট ১৩ শতাংশ জমির। পরপর চারবার আবেদন করে দুই দফায় তাকে খারিজ দেয়া হলো মোট সাড়ে ৮ শতাংশ জমির। ঘুষের টাকা জোগাড় করতে না পারায় অবশিষ্ট ৫ শতাংশ জমির খারিজের জন্য তিনি এখনো আবেদন করতে পারছেন না বলে আক্ষেপ করেন।
চলতি জানুয়ারি মাসে নামজারির আবেদন নামঞ্জুর হওয়া টঙ্গী পৌর ভূমি অফিসের নথি নং-৫৩৯৭, ৭৮৬৪, ৫৮৬৫ এবং গাছা ভূমি অফিসের ৪৩৭৫, ৪৯৮৬ ও ৪৯৮৬ নং নথির আবেদনকারীরা অভিযোগ করে জানান, নথিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত থাকার পরও কেবল প্রত্যাশিত ঘুষ না দেয়ায় তাদের এসব আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
আউচপাড়া আবাসিক এলাকার আরএস ১৫২নং খতিয়ানে ৪৮১নং দাগের জমি চালা শ্রেণী হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। রাজস্ব ফাঁকি দিতে ভূমি কর্মকর্তারা ৪৮১নং দাগের ৭৮০৬নং জোতের জমিকে হালিপাট (বীজতলা) দেখিয়ে নামজারি করেছেন।
এ দিকে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়েও মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবাসিক, বাণিজ্যিক বা অকৃষি জমিকে উৎকোচের বিনিময়ে কৃষি জমি দেখিয়ে প্রতি শতাংশে দুই টাকা করে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বড় দেওড়া মৌজার ২১৭৯ নম্বর জোতের আবাসিক জমিকে জলাকরা শ্রেণী দেখিয়ে ২ টাকা শতাংশ করে ১৩ শতাংশ জমির এক বছরের খাজনা নেয়া হয় ২৬ টাকা। যার চেক বা রসিদ নং-জি ৮৩৮১২৮। অপর দিকে কাকিল সাতাইশ মৌজার ৮২৮২ নং জোতে জলাকরা শ্রেণীর সোয়া আট শতাংশ পতিত জমির এক বছরের খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) নেয়া হয় আবাসিক রেটে ৬০ টাকা শতাংশ করে মোট ৫৪০ টাকা। যার রসিদ নং- ডব্লিউ ৫০৭৫৯৬। টঙ্গী মাছিমপুর মৌজার ৫৯১ নং জোতে প্রায় এক শতাংশ জমিতে অবস্থিত দোকানের ১৪২৭ বাংলা সনের খাজনা নেয়া হয় ৫০০ টাকা। রসিদ দেয়া হয় ৩০০ টাকার। আবার রসিদে দোকানকে বাড়ি দেখানো হয়। রসিদের ক্রমিক নং ডব্লিউ ৫০৭৫০৭।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আউচপাড়ার একজন বাড়ির মালিক জানান, টঙ্গী পৌর ভূমি অফিসে বাড়ির খাজনা দিতে গিয়ে জানতে পারেন, তার ১০ শতাংশ জমির বকেয়া খাজনার পরিমাণ তিন হাজার টাকা। সুদে-আসলে বা জরিমানাসহ তাকে চার হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। তিনি দুই হাজার টাকা দিলে তাকে মাত্র ১০০ টাকার রশিদ ধরিয়ে দেয়া হয়। বাকি টাকা পকেটস্থ করেন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টঙ্গী ভূমি রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) মো: আল আমিন বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক পেলেই আমরা নামজারির আবেদন মঞ্জুর করে থাকি।


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল রাজশাহীর পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ শিশুর মৃত্যু দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক দুমকিতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সভাপতির নির্দেশে ক্লাস চালু সিদ্ধিরগঞ্জে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩ ডাকাত গ্রেফতার

সকল