২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজবাড়ীতে আদালতের ক্রোকাদেশ সত্ত্বেও পাটকল সচল রেখেছে তৃতীয় পক্ষ

ডেসটিনি মালিকানাধীন পাটকল : নয়া দিগন্ত -

রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর এলাকায় আট একর জমির উপরে ২০০৪ সালে নিহাজ জুট স্পিনার্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার খলিলপুর এলাকার মো: নিহাজ উদ্দিন সরদারের ছেলে শহিদুজ্জামান চয়ন।
এরপর মিলের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপর সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর শাখার হতে গত ২০০৫ সালের ১৬ মার্চ ১৪ কোটি ৭৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৬১ টাকা ঋণ নেন। পরে শর্ত মোতাবেক তা পরিশোধ করতে না পারায় ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ ব্যাংকটি সুদ আসলে ২২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকার দাবিতে ফরিদপুর যুগ্ন জেলা জজ ১ম ও অর্থঋণ আদালতে মোকর্দ্দমা দায়ের করেন। মামলার বিচার কার্য শেষ হওয়ার পর আদালত বিবাদিপক্ষের ডিগ্রিকৃত ২২ কোটি ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৪৫০ টাকা ৪৫ দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ অন্যথায় আদালতের যোগে আইন সঙ্গত উপায়ে পাওনা আদায় করতে পারবে বলে জানান।
এ দিকে মিলটির পরিচালনাকালীন শহিদুজ্জামান চয়ন ব্যাংক ঋণের তথ্য গোপন করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে মিলের ৭৫ শতাংশ শেয়ার ডেসটিনি গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেন। তখন থেকে মিলটির নামকরণ করা হয় ডেসটিনি নিহাজ জুট মিলস লিমিটেড। অপর দিকে ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এর ৮.৫ লক্ষাধিক সাধারণ সদস্যের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১১ শত ৭৮ কোটি ৬১ লাখ ২৩ হাজার ২৪ স্থানান্তর ও রূপান্তরের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকার কলাবাগান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯ এর ৪ (২) ধারায় তৎসহ মানিলন্ডারিং আইন ২০১২ এর ৪(২) (৩) দায়ের করেন। পরে মহানগর দায়রা জজ মিলটির মালামালসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্রোকের নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকা থেখে প্রেরিত পত্রের আলোকে তৎকালীন রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার রাজবাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মিলটির কর্মকর্তাদের নিয়ে মালামাল ক্রোক করার ও মিলের সামনে এই মিলের কোনো সম্পত্তি, ক্রয়-বিক্রয়, স্থানান্তর ও হস্তান্তর করা যাবে না মর্মে সাইনবোর্ড টাঙানোর নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ মিলের সব সম্পত্তি ক্রোক ও তালিকা প্রণয়ন করে মিলটির তৎকালীন সহকারী ম্যানেজার আবদুল হান্নান ও চিফ সুপারভাইজার মো: আরিফ সরদারের জিম্মায় প্রদান করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিলটি নিয়ে আদালতের এত এত কঠোর নির্দেশনার মধ্য দিয়েও শহিদুজ্জামান চয়ন মিলের অভ্যন্তরে থাকা আট একর জমির মধ্যে ৩.৫২ একর জমি গোপনে তার স্ত্রী মোর্শেদা চয়ন রানীর নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। বিষয়টি জানতে পেরে মিলের জমির মালিক মো: আক্কাছ আলী, শহিদুজ্জামান চয়নসহ আরো ছয়জনকে আসামি করে রাজবাড়ী থানায় অপর একটি মামলা করেন। এরপর থেকে পলাতক রয়েছে মো: শহিদুজ্জামান চয়ন।
এ দিকে তিন-চারটি মামলা ও আদালতের নির্দেশনায় মালামাল ক্রোক করার পরও মিলটি রয়েছে সচল। মিলের লভ্যাংশ কোথায় যাচ্ছে কতজন শ্রমিক কাজ করছে সরেজমিন মিলটিতে গিয়ে দেখা যায় মিলের চাকা ঘুরছে স্বাভাবিক নিয়মেই। সেখানে অন্তত একশত শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছে।
এ সময় কথা হয় মিলটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মো: আবদুল হান্নান মিয়ার সাথে, তিনি বলেন, মিলটি দেনার দায়ে জর্জরিত। আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে আমাদের দু’জনকে মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখান থেকে আমি প্রতি মাসে বেতন নেই। আর এক শত শ্রমিক আছে, তাদের বেতন প্রদান করি। ডেসটিনির মালিকানাধীন ক্রোককৃত সম্পত্তি চালু কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিলের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে তাই আমরা চালু রেখেছি। তিনি আরো বলেন, চালু রাখার ব্যপারে বা বন্ধ করে রাখার ব্যাপারে কোনো কাগজ নেই আমাদের কাছে। তবে শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে মিলটি চালু রেখেছি মাত্র। তা ছাড়া এখনো মিলটি লোকসানেই চলে। কানাইপুরের কিছু ব্যবসায়ী আছে যারা এর ভাগিদার। অপর দিকে মিলটিতে বিভিন্ন কিস্তিতে ফারুখ নামে পরিচালনা পর্ষদের এক ব্যক্তির মাধ্যমে বাকিতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার পাট দিয়ে বিপাকে পড়েছেন কানাইপুর এলাকার পাট ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লা। এ নিয়ে কয়েকবার সালিস মীমাংসা মাত্র দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা পেলেও বাকি টাকা চেয়ে বিভিন্ন হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: মাইনউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জানার পর ক্ষতিয়ে দেখতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেছি। আইনগতভাবে তারা দোষী হলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধ যদি কেউ করে তাকে অবশ্যই তার কর্মফল ভোগ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement