২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অবকাশ যাপনে ঢাকা ছাড়বেন ৫০ লাখ মানুষ

টিকিট আর রুম বুকিংয়ের হিড়িক
-

ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি। ঢাকা ছাড়বেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজে রুম এবং সড়ক ও আকাশ পথে টিকিট বুকিংয়ের হিড়িক পড়েছে। শেষ হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং। সড়ক ও আকাশ পথের ৯০ শতাংশ টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকিগুলোও সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্যুরিজম, হোটেল-মোটেল ও অ্যাভিয়েশন খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় দেড় বছর পর করোনার ছোবল কমে আসায় দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে সময় কাটাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। সামনে ১৬ ডিসেম্বর এরপর বড়দিন, থার্টিফাস্ট শেষে একুশে ফেব্রুয়ারি। সব মিলিয়ে দফায় দফায় ছুটির আমেজ পরিবারের সাথে উপভোগ করতে ঢাকা ছেড়ে তারা কক্সবাজার, বান্দরবান, সেন্টমার্টিন কিংবা সিলেটে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ধাপে ধাপে অর্ধকোটি পর্যটকের আগমন ঘটবে।
আর ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েসনের (টোয়াব) বলছে, করোনায় আন্তর্জাতিক পর্যটক কমে গেলেও আগামী তিন মাসে অভ্যন্তরীণ পর্যটক ৫০ লাখ ছাড়াবে।
তবে পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা কমে এলেও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে এ খাতেও প্রভাব পড়েছে। যাতায়াতসহ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। কারণ বর্তমান সময়ে পর্যটকদের চাপ বেড়ে যাওয়ার সাথে অনেক হোটেল-মোটেলে রুম সঙ্কটের সাথে িিতন থেকে চার গুণ ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে মুনাফা কমে যাওয়ার এ ব্যবসায় টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েসনের (টোয়াব) সভাপতি ও ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনার আগে দেশের ভেতরে ও বাইরের কয়েক কোটি পর্যটকের আনাগোনা হলেও করোনায় এখন তা কমে গেছে। বর্তমানে করোনা কমে আসার সাথে পর্যটন খাত চাঙ্গা হতে শুরু করলেও আবার করোনার নতুন ধরন শনাক্তে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তারপরও চলতি ডিসেম্বর থেকে আসছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ভেতরে কমপক্ষে ৫০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। অপর দিকে সংগঠনের সচিব নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া নয়া দিগন্তকে জানান, তারা আশা করছেন আগামী তিন মাসে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তিন কোটি পর্যটক আনাগোনা করবেন।
ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো: কামরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, সবসময়ই বছরের শেষদিকে সড়ক পথের সাথে আকাশ পথেও যাত্রীদের চাপ বাড়ে। এবারো তাই হয়েছে। সামনে বিজয়, বড়দিন এবং থার্টিফাস্ট সব মিলিয়ে ইতোমধ্যে তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রভাব অ্যাভিয়েশন খাতেও পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তেলের দাম যে হারে বেড়েছে ভাড়া সে হারে বৃদ্ধি করা যায়নি। তাই ফ্লাইটে যাত্রী পূর্ণ হলেও লোকসান পুষিয়ে নেয়া কষ্টকর হয়ে গেছে। তারপরও যাত্রীদের স্বার্থ বিবেচনায় ভাড়া না বাড়িয়ে টিকে থাকার চেষ্টা চলছে। একই তথ্য জানান নভোএয়ারের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নভেম্বর-জানুয়ারি সামনে রেখে তাদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষপর্যায়ে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: আবুল কাশেম সিকদার নয়া দিগন্তকে জানান, চলতি ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের যাতায়াত হবে বলে তাদের ধারণা। কারণ কক্সবাজারে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ ও রিসোর্ট রয়েছে। ইতোমধ্যে তার প্রায় ৮০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বাকি সবগুলো বুকিং হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। হোটেল-মোটেলে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার তেমন জানা নেই। কেউ তা করে থাকলে এটা একান্ত ব্যক্তিগত। সমিতি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি কিংবা অবগতও নয়। তবে সারা বছরের প্রথম ১০ মাস নির্ধারিত ভাড়া থেকে ছাড় দেয়া হলেও এ সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই অনেকে ভাড়া বেড়েছে এমনটা বলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই কথা জানান কক্সবাজার সি ব্রিজ রিসোর্টের ম্যানেজার আহাদুজ্জামান নয়ন ও বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সুমেয়াত নূরী জানান, সিলেটে প্রায় ৩০টির মতো হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এর বাইরে সঠিক হিসাব না থাকলেও হোটেল রয়েছে প্রায় আড়াই শ’। সবার এখন ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। কারণ সারা বছরের মধ্যে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এই দুইমাস ব্যবসার সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। করোনা শুরুর পর এই প্রথম তারা আশার আলো দেখছেন। আসছে ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে তাদের অগ্রিম বুকিং শুরু হয়েছে। সামনে বড়দিন ও থার্টিফাস্ট সব মিলিয়ে আরো কয়েক দিনের মধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং শেষ হয়ে যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যাওয়া ট্যুরিস্টদের নিয়ে কাজ করেন ঢাকা ট্যুরিস্টের পরিচালক মো: মোস্তাফিজুর রহমান। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, প্রায় দেড় বছর পর ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও দেশের সব পর্যটন এলাকায় হোটেল-মোটেল ফাঁকা নেই। তা অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এখন যা আছে তার দাম চার গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যবসায় মুনাফা বলে কিছু থাকছে না।
অপর দিকে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়া ট্যুরিস্টদের নিয়ে কাজ করেন সুমন পারভেজ। রিলাক্স ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপক তিনি। সুমন জানান, সেপ্টেম্বর থেকেই তারা জাহাজে করে সুন্দবন ট্যুরের কাজ শুরু করেছেন। তবে ডিসেম্বর থেকে পর্যটকদের চাপ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সে সাথে প্যাকেজের খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement