সমবায় ব্যাংকের ১৪ কোটি টাকার মার্কেট দেড় কোটি টাকায় বিক্রি!
- মুহাম্মদ হানিফ ভুঁইয়া নোয়াখালী অফিস
- ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর টাউন হল মোড়ে নোয়াখালী সমবায় ব্যাংক মার্কেট অনিয়মের মাধ্যমে নামমাত্র দামে বিক্রি করে দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের বিপুল টাকা গচ্চা যাওয়া ছাড়াও মার্কেটটিতে দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়ে মার্কেটের ভুক্তভোগী দোকান মালিকরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা প্রশাসক, সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী দোকান মালিক লিয়াকত আলী খান, দলিলুর রহমান দুলাল, রাশেদুল ইয়াছিন চৌধুরী মিঠু জানান, গণপূর্ত বিভাগের নামে সৃজিত এমআরআর ৩ নং খতিয়ানের ১৪১৫ দাগে ১ একর ৩০ শতাংশ সম্পত্তি গণপূর্ত বিভাগ জনস্বাস্থ্য বিভাগকে প্রদান করে। পরে জনস্বাস্থ্য বিভাগ ১৯৮২ সালের ৭ অক্টোবর ১৬১৪৮ নম্বর একটি রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে ১৪ শতাংশ সম্পত্তি নোয়াখালী সমবায় ব্যাংক লিমিটেডকে হস্তান্তর করে। হস্তান্তর দলিলের ২ নম্বর শর্তে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে জনস্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত ওই জমি জনস্বাস্থ্য বিভাগের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কারো কাছে বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। ওই জমি বুঝে নেয়ার পর সমবায় ব্যাংক লিমিটেড সেখানে একটি ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভবনের দোকানঘর বরাদ্দের জন্য আবেদন আহ্বান করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দোকানঘর বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সমবায় ব্যাংক লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছে ৩০ জন আবেদন করেন। এদের মধ্যে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রতিটি দোকানঘর ৫০ হাজার টাকা সেলামির বিনিময়ে ১৯ জনকে বরাদ্দ দেয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড। এরপর থেকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বরাদ্দ পাওয়া দোকান মালিকরা।
চলতি বছরের ৪ অক্টোবর নোয়াখালী সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক আজাদ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধকের পূর্ব অনুমতি ছাড়াই ভবনটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। চুক্তি ভঙ্গ করে তারা নোয়াখালী সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের মার্কেট ভবনটি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামমাত্র দামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেন।
ভুক্তভোগী মালিকরা জানান, ১৪ শতাংশ জমির ওপর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সমবায় মার্কেটের জমিটির বর্তমান বাজার দর প্রতি শতাংশ এক কোটি টাকা করে ১৪ কোটি টাকা হলেও মাত্র এক কোটি ৬০ লাখ টাকায় ভবনসহ গোটা জমিটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মার্কেটটি বিক্রি করে দেয়ায় সমবায় সমিতির শেষ সম্বলটি আর থাকল না। এতে আমাদেরকে পথে বসতে হবে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘সমবায়সমূহের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি কেউ যদি বিক্রি করতে চায় সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমতি প্রয়োজন হবে।’ কিন্তু নোয়াখালী সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে পাওয়ার ও চুক্তিপত্র দলিল দেয়ার আগে সব নিয়মই ভঙ্গ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নোয়াখালী সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক আজাদের বক্তব্য নিতে তার মেবাইল ফোনে বার বার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
জনস্বাস্থ্য বিভাগ নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাস জানান, নোয়াখালী সমবায় ব্যাংক লিমিটেড মার্কেটটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে মর্মে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টির নথিপত্র পর্যালোচনা করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।