মিটফোর্ড হাসপাতালে কোভিড টিকার জাল সনদ চক্র সক্রিয়
- শামীম হাওলাদার
- ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:৪৫
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকার জাল সনদ প্রদান ও টিকার মেসেজ-বাণিজ্য করছে একটি চক্র। তারা কাউকে টিকা না দিয়েও সরকারি সিল বানিয়ে জাল টিকার সনদ প্রদান করত। বিশেষ করে লিবিয়া প্রবাসীদের কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তিতে এ সার্টিফিকেট বিক্রি করছে চক্রটি। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাদি হয়ে ১০ জনের বিরুদ্ধে ডিএমপি বংশাল থানায় মামলা দায়ের করে। তারমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগে ১০ জনকে আইনের আওতায় নেয়া হলেও তাদের নিয়ন্ত্রক মূল হোতারা এখনও অধরা রয়ে গেছে। তারা শুধু লোক জোগাড়ের দায়িত্ব পালন করত। মেসেজ পাইয়ে দেয়া ও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকা দিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন কাজে নির্দিষ্ট একটি চক্র সমন্বয় করত। মেসেজ ও সিরিয়াল ভেঙে টিকা পেতে সহায়তা করত আনসার কমান্ডার কামরুল ইসলাম ও ডিউটিরত আনসার সদস্যরা। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন নামে একজন আনসার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন কমান্ডার কামরুল। টিকাবাণিজ্য চক্রের সদস্যদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী দ্রুত তাদের টিকা পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ দিকে সমির ওরফে তানভীর নামে এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, তার ভগ্নিপতি লিবিয়া যাবে। টিকা দেয়া হয়নি। পাঁচ হাজার টাকা চুক্তিতে টিকা ও সার্টিফিকেট দেবে বলে আনসার কমান্ডার কামরুল জানান।
মিটফোর্ড হাসপাতালের আনসার কমান্ডার কামরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার পরিচিত বা আত্মীয়-স্বজন কেউ এলে তাদের একটু হেল্প করি। তা ছাড়া অন্য কোনো লোকজনের জন্য সুপারিশ করেন না বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ওই চক্রের পাঁচজনকে আটক করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১০ জনের নামোল্লেখ করে মঙ্গলবার বংশাল থানায় জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মামলায় মিটফোর্ড হাসপাতাল ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী রয়েছে। মামলার এজহারভুক্ত আসামিরা হলেনÑ মিটফোর্ড হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী সুপারভাইজার ফিরোজ আলম (২৯), ইমন (২৬) ও কম্পিউটার অপারেটর মুজাহিদ। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের হলদিয়া এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে মজিবুর রহমান (৩০), বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পটিখালী গ্রামের আইয়ুব আলী মল্লিকের ছেলে রুবেল মল্লিক (৩১), ডিএমপির দক্ষিণ খান কাওলা জামতলা এলাকার গাজী গোলাম মোস্তফার ছেলে গাজী এখলাস উদ্দিন (৩১)। এ ছাড়া মো: রাব্বি, মো: বেলাল, মো: কাইউম ও আবু রায়হানের নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিক উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা টিকার কার্ড কম্পিউটার প্রিন্ট দিয়ে বের করে নিজেরাই সিল মেরে টিকা না দিয়েই সনদ প্রদান করত। ওই সব অভিযুক্তের কাছ থেকে টিকা কার্ড প্রিন্ট দেয়ার ডেস্কটপ, প্রিন্টার, বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টের চেকবই, কোভিড নেগেটিভ ভুয়া সনদ ও সরকারি সিল উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বংশাল থানার ওসি আবুল খায়ের মামলার সত্যতা নিশ্চত করে নয়া দিগন্তকে বলেন, ডিবি গুলশান সার্কেলের পরিদর্শক নূরে আলম সিদ্দকী বাদি হয়ে ১০ জনকে আসামিকে মামলা করেছেন। তারমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।