১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পটুয়াখালীর নান্দনিক পায়রা সেতু উদ্বোধন ২৪ অক্টোবর

-

দেশের প্রথম আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের নান্দনিক পায়রা সেতু আগমী ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সেতুটি উদ্বোধন করবেন এবং ওই দিনই তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। গত সোমবার সড়ক বিভাগের এক পত্রের মাধ্যমে তথ্য জানা গেছে।
এ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে পদ্মার শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ী থেকে সরাসরি কুয়াকাটার সঙ্গে প্রায় ২১৩ কিলোমিটার সড়কের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে।
এ সেতুটির মাধ্যমে এখানকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর সর্বোপরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ফেরিবিহীন নির্ঞ্ঝাট যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
বরিশাল বিভাগের এ যাবতকালে নির্মিত সর্ববৃহৎ এ সেতুটি দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে পটুয়াখালী-বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় ১০ উপজেলার অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হবে অভূতপূর্ব উন্নয়ন।
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার শেষ ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের শুরুর অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পায়রা নদীর ওপর সেতুটির অবস্থান। বরিশালের প্রান্তে সেতুটির পশ্চিম দিকে শেখ হাসিনা সেনানিবাসের অবস্থান। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে এ সেতুটি ১৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বরিশাল নগরের রুপাতলী থেকে ২৯ কিলোমিটার, পটুয়াখালী শহর থেকে ১১ কিলোমিটার এবং সাগরকন্যা কুয়াকাটার বাস টার্মিনাল থেকে ৭৯ কিলোমিটার দূরে এ সেতুর অবস্থান। সেতুর উত্তর দিকে ওজন স্কেল এবং দক্ষিণ দিকে ইলেকট্রনিক্স টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে।
পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: আবদুল হালিম জানান, এই সেতুর কিছু বিশেষত্বের মধ্যে একটি হলো সব থেকে ডিপেস্ট ফাউন্ডেশন। ১৩০ মিটার পাইলবিশিষ্ট সেতু এটি, যা পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও করা হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুর আগে আমাদের এটা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন এছাড়া প্রথবারের মতো এই সেতুতে আমরা ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু করেছি। বিভিন্ন দুর্যোগ বা ওভার লোডেড গাড়ি চলাচলের ফলে ব্রিজের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেগুলোতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে এ ধরনের আশঙ্কা থাকলেও সিস্টেম সিগন্যাল দেবে। এটা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনো সেতুতে সংযোজন করা হয়েছে।
২০১২ সালের মে মাসে একনেকে সরকারের অনুমোদন লাভ পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালী সফরে এসে ফোরলেন বিশিষ্ট পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ২০১৬ সালের জুলাইয়ের দিকে শুরু হয় সেতুর ভৌত কাজের। নকশাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়। এসব কারণে কয়েক দফায় বেড়ে সর্বশেষ এ সেতু প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ৪৪৭ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায় যা শুরুর দিকের আনুমানিক মূল ব্যয়ের সাড়ে তিন গুণেরও বেশি, শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ সেতুর নির্মাণের কাজ করে।
এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের এই চারলেনের সেতুটি কর্ণফুলী সেতুর আদলে এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে তৈরি। ফলে নদীর মাঝখানে একটিমাত্র পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ১৭ এবং ১৮ নম্বর পিলারের পাইল ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্য যা দেশের সর্বোচ্চ গভীরতম পাইল। নদীর মধ্যে এবং পাশে থাকা মূল পিলারে যাতে কোনো নৌযান ধাক্কা দিতে না পারে। সে জন্য পিলারের পাশে নিরাপত্তা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। পদ্মার থেকেও বড় স্প্যান অর্থাৎ ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি স্পান বসানো হয়েছে এ সেতুতে। সেতুটি নদীর জলতল থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচু, ফলে নদীতে নৌযান চলাচলে কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না। এছাড়া রাতের বেলা সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হবে সেতুটি। সেতুটিতে রয়েছে আকাশ ও নৌপথের জন্য সিগন্যাল বাতি। এছাড়া সেতুটিতে ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু রাখা হয়েছে। ফলে যেকোনো ত্রুটির আগাম সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement