দেশে প্রতিদিন ২১০ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি ষ
- আবুল কালাম
- ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশে প্রতিদিন প্রায় ২১০ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হয়। এর মধ্যে শুধু ঢাকা শহরেই দিনে ৪৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে এ কথা জানান। এই কর্মকর্তার মতে সারা দেশে প্রতিদিন ৭০ লাখ ইয়াবা বিক্রি হয়। এর মধ্যে ঢাকায় বিক্রি হয় ১৫ লাখ। যার বাজার দর প্রতিটি ৩০০ টাকা করে হলেও ৭০ লাখ ইয়াবার মূল্য দাঁড়ায় ২১০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবা আসার পর দেশে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে। বছরে ইয়াবা বিক্রি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ইয়াবা গ্রহণকারীদের মধ্যে শুধু নারী রয়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম আলাপকালে জানান, নিয়ন্ত্রণের অনেক চেষ্টার পরও মাদকের বিস্তার রোধ কঠিন হয়ে পড়েছে। ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণে মালয়েশিয়ার কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, মাদক সেবনকারী কিংবা বিক্রেতাদের আটক করেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ জন্য মাদকের সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণের সাথে বিক্রেতাদের কাছে ক্রেতা সঙ্কট তৈরি করতে হবে। এভাবে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিলে এক সময় তা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
অপরদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মো: মোসাদ্দেক হোসেন রেজা নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে মাদকসেবী এবং কী পরিমাণ ইয়াবা বিক্রি হয় তার কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে এটা ঠিক যে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতা ইয়াবাকে ঘিরে। কারণ ইয়াবা বহনযোগ্য হওয়ায় তা সহজে বেশি বিস্তার হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ইয়াবার মূল উৎস মিয়ানমার। আমরা উৎস বন্ধ করার চেষ্টা করছি।
এর আগে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছিলেন, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির মাদক সেবনে বছরে খরচ হয় ৫৬ হাজার ৫৬০ টাকা থেকে ৯০ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসাবে ১ কোটি মাদকসেবীর পেছনে বছরে ব্যয় ৫৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা থেকে ৯০ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইয়াবা আসার পর দেশে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ আকারে বেড়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বছরে শুধু ইয়াবা বিক্রি হয় ৪০ কোটির মতো। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এই ইয়াবা সেবনকারীর মধ্যে ৪৩ শতাংশ নারী।
অরুপ রতন বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী মাদক কারবারে জড়িত আছে ২০০ গডফাদার ও ১ লাখ ৬৫ হাজার বিক্রির নেটওয়ার্ক। এদের মাধ্যমে মাদক খাতে বছরে লেনদেন হয় ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর বেশ কিছু সংস্থার তথ্যানুযায়ী অবৈধ মাদক আমদানিতে প্রতি বছর বিদেশে পাচার হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই চিকিৎসকের মতে, ইয়াবা আসক্তের শতকরা ৯০ ভাগ কিশোর ও তরুণ এবং ৪৫ শতাংশ বেকার। ৬৫ শতাংশ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৫ বছরের বেশি বয়সের মাদকসেবী আছে ৬৫.২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৪৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ জন তরুণ যুবকের প্রতি ১৭ জনে একজন মাদকাসক্ত।
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোরদের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক কারবারে জড়িত। এদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ ও ১৬ শতাংশ নারী। অরুপ রতন ছাড়াও এ নিয়ে র্যাব মহাপরিচালক থাকাকালীন বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, ‘দেশে ৭০ থেকে ৮০ লাখ মানুষ নিয়মিত মাদক সেবন করছে। এতে বছরে ১ লাখ কোটি টাকা বিনা কারণে খরচ হচ্ছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা