২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কমিটি গঠন নিয়ে সরব বরিশাল বিএনপি

একনেতা একপদ নীতির বাস্তবায়ন চান তৃণমূল নেতাকর্মীরা

-

বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছেন এখানকার বিএনপি নেতারা। ২০১০ সালে অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ারকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হিসেবে রূপ পায় ২০১৩ সালে। এই সময়ের মধ্যেই মারা যান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীন। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার। কিন্তু এতদিনেও তিনি পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটি দিয়েই এখন পর্যন্ত চলছে বরিশাল মহানগর বিএনপির কার্যক্রম।
বরিশাল বিএনপি বলতে দলের যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ারকেই বোঝেন বরিশালের মানুষ। কিন্তু টানা ৩০ বছরেরও বেশি সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বে থাকায় দলকে এককভাবে হাতের মুঠোয় নিয়ে নেন তিনি। যার কারণে বরিশাল বিএনপিতে বিকশিত হয়নি বিকল্প শক্তিশালী কোনো নেতৃত্ব।
এবারই প্রথম অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্ব পেতে মাঠে নেমেছেন ৪ প্রভাবশালী বিএনপি নেতা। কেবল শীর্ষ নেতৃত্বই নয়, সাধারণ সম্পাদক বা সদস্যসচিব পদের জন্যও জোট বেঁধেছেন সরোয়ারবিরোধীরা। তারা চান ‘একনেতা একপদ’ এই নীতি যেন বাস্তবায়ন করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
করোনা মহামারীর কারণে সঠিক সময়ে কাউন্সিল করা যায়নি উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাঠের রাজনীতিতে যারা সক্রিয়, তারাই কমিটির নেতৃত্বে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। তা ছাড়া আমি চাই কমিটি হোক কাউন্সিলের মাধ্যমে। কাউন্সিলররা তাদের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করুক।’
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে বিএনপির এমপি হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস (মরহুম)। তিনি রাষ্ট্রপতি হলে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন মজিবর রহমান সরোয়ার। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ওই সময় রহমান বিশ্বাসের ছেলে এহতেশামুল হক নাসিম বিশ্বাস এমপি নির্বাচিত হন। নাসিমের মৃত্যুর পর আবারো উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এমপি হন সরোয়ার। সেই থেকে এ পর্যন্ত এখানে বিএনপির রাজনীতি মানেই মজিবর রহমান সরোয়ার।
মজিবর রহমান সরোয়ার ছিলেন বরিশালের জেলা মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের হুইপ, বরিশালের সিটি মেয়র ও এমপি।
বরিশালের স্থানীয় রাজনীতিতে একক অধিপত্য ধরে রাখা মজিবর রহমান সরোয়ার নিজেই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো থেকে শুরু করে মূল দলের নেতাকর্মীদের একটা অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তারা চান নেতৃত্বের পরিবর্তন আসুক।
দলের ভেতর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে মহানগর বিএনপির একটি অংশ থেকে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দেন সরোয়ারের পক্ষের বরিশাল মহানগর বিএনপির ৩০টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
নেতৃত্ব আর আধিপত্য প্রশ্নে অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের যখন এমন অবস্থা, ঠিক সেই সময়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান জানান, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয় কমিটি এই বিভাগের মেয়াদোত্তীর্ণ সব ক’টি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ‘একনেতা, একপদ’ নীতি বাস্তবায়নের দিকেই যাচ্ছে বিএনপি। তিনি বলেন- আপনারা দেখেছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে পটুয়াখালী জেলা কমিটির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, একইভাবে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির পদ থেকে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বরিশালেও এমন কিছু হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথমে গঠন করা হবে আহ্বায়ক কমিটি। এই কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে। বরিশাল মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এখানে আহ্বায়ক পদের জন্য চেষ্টা করছেন আরো চারজন বিএনপি নেতা। তারা হলেনÑ দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন। সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালের নামও রয়েছে আলোচনায়। সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় আছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ও বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব পদের জন্যও লড়ছেন বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑ বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির, মহানগর কমিটি থেকে পদত্যাগ করা শাহ আমিনুল ইসলাম, মহানগর যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামিম এবং ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জি এম আতায়ে রাব্বি। তাদের মধ্যে জিয়াউদ্দিন সিকদার ছাড়া বাকিরা নব্বইয়ের দশকের ছাত্রদল নেতা।
কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছেÑ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীমকে চাইছেন অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ার। এই খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন শিকদার কেন্দ্রের কাছে তার দুই যুগের দলীয় অবদান তুলে ধরে বলেছেনÑ আওয়ামী লীগের ক্ষমতার এক যুগে রাজপথে সক্রিয় থাকায় তার বিরুদ্ধে ৫২টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। একাধিকবার জেল খেটেছেন।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির বলেন, সারা দেশেই একটা সময়ের পর দলের নেতৃত্বে আসেন সাবেক ছাত্রনেতারা। কেবল বরিশালেই ব্যতিক্রম।
বরিশাল মহানগর যুবদলের বর্তমান সভাপতি ও বিএম কলেজের সাবেক জিএস অ্যাডভোকেট আকতারুজ্জমান শামীম বলেনÑ ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। মহানগর যুবদলের সভাপতি হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময় রাজপথে ভূমিকা রেখেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজার প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে মিছিল থেকে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছি, এখনো ৭টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হিসেবে দিনযাপন করছি। কেন্দ্রীয় কমিটি ভালো মনে করে যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা অকপটে মেনে নিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল