২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আতাউস সামাদের মতো সাংবাদিকরা আমাদের দৃষ্টান্ত : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আতাউস সামাদের মতো সাংবাদিকরা আমাদের দৃষ্টান্ত। আতাউস সামাদ যেভাবে ভেতরের খবর তুলে আনতেন, সেভাবে খবর তুলে আনা দরকার। তার প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে আতাউস সামাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল।
গতকাল বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন। আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ এ সভার আয়োজন করে। স্মরণসভায় প্রথমবারের মতো আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার ২০২১ পান বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক এ বি এম রফিকুর রহমান।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা কেবল ঘটনার পেছনে ঘোরবেন না। ঘটনার গভীরে যাবেন। কী ঘটতে যাচ্ছে সেটার আভাস দেবেন। আমরা জানি সাংবাদিকরা এখন কী বিপদের মধ্যে রয়েছেন। তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এখন ঐক্য দরকার। সব পেশাজীবীর মধ্যে ঐক্য থাকা দরকার। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ঐক্য কেবল তাদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা রক্ষা করার জন্য নয়। তারা যদি এ ঐক্য করেন, তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সাংবাদিকতার জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যে একেবারেই অপরিহার্য, তা তারা কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে, চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের লোক বিবৃতি দেন এবং সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের অ্যাসোসিয়েশন আছে। কোনো অন্যায় হলে তারাও বিবৃতি দেন। রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমের মালিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখছি, শীর্ষ সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে অপমানজনক তৎপরতা চলছে। আমরা মনে করি আপনাদের (সাংবাদিকদের) ঐক্য স্থায়ী হওয়া দরকার।
বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের কথা উল্লেখ করে এ অধ্যাপক বলেন, আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। তার সাংগঠনিক ক্ষমতার বিবর্তনটা আমি দেখেছি। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় পাকিস্তান অবজারভারের সংবাদদাতা ছিলেন। তিনি আরেকটা বড় কাজ করেছিলেন। সেটা হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা তাকে দেখেছি ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময়, একাত্তরের যুদ্ধের সময় এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি কারাভোগ পর্যন্ত করেছেন, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আতাউস সামাদ যখন একটি রিপোর্টের আইডিয়া নিয়ে কাজ করতেন, সেটি ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্তি পেতেন না। তিনি খবরটা বের করতে চাইতেন এবং তা করতেন।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, আতাউস সামাদ সত্যের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি সবদিক থেকে তথ্যকেই মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি যে সত্যান্বেষী এটা সবচেয়ে বড় চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য। তিনি যেকোনো সংবাদ কয়েকবার পরীক্ষা না করে ছাড়তেন না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আতাউস সামাদ অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আতাউস সামাদ ছিলেন একজন অবিসংবাদিত সাংবাদিক। কাজের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন শতভাগ সচেতন। তার কোনো প্রতিবেদন কেউ কোনো দিন ভুল কিংবা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা আজকাল নিজের মতো করে খবর লিখি। অদৃশ্য সূত্রের ওপর দায় চাপিয়ে দেই। অথচ আতাউস সামাদ এটা করতেন না। তিনি সূত্র ছাড়া কোনো খবর জানাতেন না। তিনি গোঁজামিল দিতেন না। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজ, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement