১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কেরানীগঞ্জে গরুর উচ্ছিষ্ট প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

-

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই ঢাকার কেরানীগঞ্জের লোকালয়ে গড়ে উঠেছে গরুর উচ্ছিষ্ট প্রক্রিয়াকরণ কারখানা। এই কারখানায় গরু জবাইয়ের পর ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে শুঁটকি জাতীয় দ্রব্য বা ডগফুড। কারখানা শ্রমিকদের দাবি গরুর এসব উচ্ছিষ্ট প্রক্রিয়া করে রফতানি করা হয় কানাডা ও আমেরিকায়। জেসি ট্রেডিং নামে প্রতিষ্ঠানটি কোনো রকম পরিবেশের ছাড়পত্র না নিয়ে অবৈধভাবে কারখানাটি পরিচালনা করে আসছে। এদিকে কারখানাটিতে মজুদ করে রাখা উচ্ছিষ্টের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
গতকাল সকালে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া নতুন রাস্তা মোড় মুজাহিদ নগর এলাকায় গিয়ে কারখানাটিতে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে গরুর কাঁচা উচ্ছিষ্ট আলাদা করছেন শ্রমিকরা। কারো হাতেই নেই গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক। দীর্ঘদিনের পচা এসব উচ্ছিষ্ট নাড়াচাড়া করছে সুরক্ষা ছাড়াই। অন্যদিকে বিশেষভাবে তৈরি ড্রাইয়ারে শুকানো হচ্ছে এসব উচ্ছিষ্ট। আরেকদিকে শুকনো উচ্ছিষ্ট টেবিলের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই কারখানায় ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল ও দুর্গন্ধে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দারা। নিয়ম না মেনে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা গড়ে ওঠায় শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আশপাশের মানুষ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে অসুস্থ হচ্ছেন শ্রমিকরাও। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে কারখানা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ চায় কেরানীগঞ্জবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ ইকবাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শাসকদলের স্থানীয় একজন নেতার সহযোগিতায় কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া জনবসতি এলাকায় অবৈধভাবে কারখানাটি পরিচালনা করে আসছে জনৈক এরশাদ উদ্দিন। তিনি ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জবাইকৃত গরু মহিষের লিঙ্গ সংগ্রহ করে তা দিয়ে কুকুরের জন্য খাবার তৈরি করে সে খাবার বিদেশে রফতানি করে আসছেন। কারখানা থেকে প্রতিনিয়তই ট্যানারি বর্জ্যরে মতো উৎকট গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধের কারণে এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মাসুদ হাওলাদার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘কারখানার বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকায় থাকা বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারখানার মালিককে বিষয়টি জানানো হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। আবার এই বর্জ্যরে দুর্গন্ধে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ বালাই। শুধু তাই নয়, কারখানার চারপাশে বসতবাড়ি হওয়ায় তীব্র দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ফয়সাল আহমেদ নামে আরেক বাসিন্দা জানান, বর্জ্যরে গন্ধে এলাকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গন্ধের তীব্রতার কারণে কেউ রাস্তে দিয়ে হাঁটাতেও পারে না। এখন বাধ্য হয়ে প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেছি। যদি প্রশাসন এই অবৈধ কারখানাটি দ্রুত বন্ধ করতে পারে তাহলে এলাকাবাসী শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। এ ব্যাপারে কারখানার ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বলেন, কারখানার সরকারি অনুমোদন আছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমি এক মাস আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছি। তবে আমার প্রতিষ্ঠানের মালিক বলছেন, লাইসেন্স নিয়েই তিনি এ ব্যবসা চালু করেছেন। পরিবেশের ছাড়পত্র এখনো হাতে পাইনি।
এ ব্যাপারে কারখানার মালিক এরশাদ উদ্দিনকে ব্যবসার ধরন ও অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লাট মিয়ার অনুমতি সাপেক্ষে জমি ভাড়া নিয়ে কারখানা গড়ে ব্যবসা চালু করেছি। যদি এলাকাবাসীর সমস্যা হয় তাহলে ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, আমি তেঘরিয়া গ্রামবাসীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কারখানাটি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement