১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধকল সামলিয়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরেছেন শ্রমিকরা

পথে পথে তিন গুণ বেশি ভাড়া প্রদান
-

গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে লালমনিরহাট থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন ফতুল্লা বিসিক শিল্পনগরীর একটি রফতানিমুখী গার্মেন্টের শ্রমিক রিনা বেগম। শনিবার বিকেলে রওনা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছান গতকাল রোববার ভোরে। সকাল ৯টার মধ্যে তাকে কাজ যোগদান বাধ্যতামূলক করে কর্তৃপক্ষ।
ফতুল্লা বিসিকের ৩ নম্বর গেটে কথা হয় রিনার সাথে। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, কষ্ট আর অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট গার্মেন্ট খুলবে তাই একটু নিশ্চিন্ত ছিলাম। হঠাৎ করে শনিবার গার্মেন্ট থেকে ফোনÑ রোববার কাজে যোগ দেয়াই লাগবে। কী আর করা। কিছু পথ হেঁটে, কিছু পথ ভ্যানে করে, বাকি পথ একটি মালবাহী ট্রাকে করে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। আমার মতো আরো ২০-২৫ জন ছিল সবাই একসাথে আসি। রিনার মতো হাজার হাজার শ্রমিক হঠাৎ গার্মেন্ট খুলে দেয়ার বিপাকে পড়েন। পেটের দায়ে সব কষ্ট হজম করে কাজে যোগ দেন তারা। করোনার কারণে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ভোগান্তি ও তিন গুণের বেশি বেশি ভাড়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জের পোশাকশ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।
সরেজমিন বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা যায় সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শত শত শ্রমিক বিভিন্ন কলকারখানায় তাদের কর্মস্থলে ফিরছেন। এদের কারো মুখেই হাসি নেই। রয়েছে রাগ-ক্ষোভ আর বিষণœতার চাপ। গার্মেন্টশ্রমিক আকলিমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের শ্রম আর ঘামে গার্মেন্ট চলে। অথচ মালিকরা আমাদের মানুষই মনে করেন না। যে কষ্ট করে মাদারীপুর থেকে এসেছি, এটি বলতে গেলে আরো কষ্ট বাড়বে।
জানা গেছে, শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক ছাড়াও আদমজী ইপিজেড, কাঁচপুর শিল্পনগরী, রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। শিবু মার্কেট এলাকায় কথা হয় গার্মেন্টের একজন কর্মকর্তার সাথে। অমল সেন নামের ওই কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, এ রকম পরিস্থিতি মালিকরা তৈরি না করলেও পারতেন। ১ আগস্ট গার্মেন্ট খুলে দেবে এটি আগে জানালে মানুষের এত হয়রানি আর দুর্ভোগের শিকার হতে হতো না। করোনার ভয় শ্রমিকদের অনেক আগেই চলে গেছে এখন তাদের ভয় চাকরি হারানোর।
ফকির অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিক দেওয়ান আবু তাহের বলেন, ‘শনিবার সকালে রওনা দিয়ে রাত ৩টার দিকে ছোট ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জে আসতে খরচ হয়েছে তিন হাজার টাকা।’
শ্রমিকদের অভিযোগ, বিধিনিষেধের কারণে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। এ কারণে তাদের ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রো বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ভেঙে ভেঙে গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরতে হয়েছে। তাদের তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ভোগান্তি নিয়ে কাজে ফিরতে হয়েছে। শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, এক হাজার ২০৪টি কারখানায় শ্রমিক উপস্থিতি ৭০ শতাংশের বেশি। শিল্প পুলিশ-৪-এর পরিদর্শক (গোয়েন্দা) শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আদমজী ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরীসহ মোট পোশাক কারখানা আছে এক হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কারখানা চালু হয়েছে এক হাজার ২০৪টি। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ৭০ শতাংশ। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান রোববার সকালে বলেন, দূরপাল্লার কিছু যাত্রীবাহী বাস চলাচল করায় সেগুলো দিয়ে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আসছেন। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক কম।

 


আরো সংবাদ



premium cement