২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আউশ ‘ব্রি হাইব্রিড-৭’র রেকর্ড ফলন

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৮ শতাংশ
-

আউশ ধানের নতুন জাত ‘ব্রি হাইব্রিড-৭’-এর রেকর্ড ফলন পেয়েছে কৃষি বিভাগ। এই জাতের আউশ ধানে বিঘায় ২৩ মণ ফলন পেয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, যা আউশ মৌসুমের অন্য যেকোনো জাতের চেয়ে অনেক বেশি। ভোলা জেলার রাজাপুর ইউনিয়নে চরমনসা গ্রামের সবুজ বাংলা কৃষি খামারে ব্রি হাইব্রিড-৭ জাতের প্রদর্শনী প্লটের ধান কর্তন ও মাঠ দিবসে এ তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর বলেন, ব্রি হাইব্রিড-৭ জাতটির আউশ মৌসুমে অন্য সব জাতের চেয়ে ফলন বেশি। আগামী দিনে এ জাতটিকে বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকের কাছে সরবরাহ করতে আমরা সচেষ্ট থাকব।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু মো: এনায়েত উল্লাহ জানান, চরমনসা গ্রামের কৃষক মো: ইয়ানুর রহমান বিপ্লবের আট হেক্টর জমির প্রদর্শনী প্লটে ব্রি হাইব্রিড-৭ জাতের বীজ বপন করা হয়েছিল এ বছরের ৮ এপ্রিল। চারা রোপণ করা হয়েছিল ৩ মে। আর কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে গত বুধবার ধান কর্তন করা হয়েছে। এ ধানের জীবনকাল ১১০ দিন। হেক্টর-প্রতি ধানের ফলন সাত মেট্রিক টন (বিঘায় ২৩ মণ)। আর চালের হিসাবে হেক্টর-প্রতি ৪.৬০ মেট্রিক টন।
জানা যায়, ধান কাটার পর মাঠ থেকেই কাঁচা অবস্থায় ৭৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। হেক্টর প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। খরচ বাদে হেক্টর-প্রতি কৃষকের লাভ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। সে হিসাবে আট হেক্টর জমিতে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।
উপপরিচালক বলেন, চলমান ২০২১-২২ আউশ মৌসুমে ব্রি হাইব্রিড-৭ জাতের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ভোলায় ১৯৮ হেক্টর জমিতে ব্রি হাইব্রিড-৭ আবাদ হয়েছে। আগামী মৌসুমে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ বলেন, ব্রি হাইব্রিড-৭ জাতের ধান কর্তনের ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। আগামী আউশ মৌসুমে এ জাতের ধান চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আউশ মৌসুমে বেশি করে এ জাতের ধান চাষ করার জন্য কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৮ শতাংশ : করোনা মহামারীর প্রকোপের মধ্যেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এ অগ্রগতি জাতীয় গড় অগ্রগতির চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। জাতীয় গড় অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ছিল ৮৫টি। প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা, যার মধ্যে দুই হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা বরাদ্দের ৯৮ শতাংশ। কৃষিমন্ত্রী বলেন, চলমান করোনা মহামারী ও ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এ সাফল্য অর্জন খুবই সন্তোষজনক। আমাদের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। আগামীতে এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে।
ড. রাজ্জাক বলেন, দেশে কৃষি উৎপাদন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কৃষিতে পড়ছে। অন্য দিকে মানুষ বাড়ছে, নগরায়ন-শিল্পায়নসহ নানা কারণে চাষের জমি কমছে, পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে চলমান কোভিডের প্রভাব। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে অত্যন্ত সচেতন ও সাবধানী হতে হবে, যাতে করে স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যেও কৃষির উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখা যায়; চলতি অর্থবছরে যে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে তার সফল বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে করে দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম। এ সময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো: রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোলসহ ঊর্ধ্বধন কর্মকর্তা ও সংস্থা প্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement