১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কন্ট্রাক্ট কিলিং গ্রুপের তিন সদস্য গ্রেফতার

চাঁদা না পেলেই গুলি করত চক্রটি

-

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার কাজ, মাটি ভরাট, ভবন নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে আসছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। তারা চুক্তির বিনিময়ে এসব কাজ করে আসছে। টার্গেটকৃত ঠিকাদাররা চাঁদা দিতে না পারলে তাদের গুলি করে ঢাকার বাইরে পালিয়ে যেত চক্রটি। গুলির ঘটনার পর অনেক ঠিকাদার ভয়ে চক্রটিকে চাঁদা দিত। এ ছাড়া চক্রটি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কিলিং মিশিনেও অংশ নিত। ক্যান্টনমেন্ট থানার আরব আলী হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের গুলশান বিভাগের একটি টিম তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ সাহজামান ওরফে বাবু, দুলাল প্যাদা ওরফে জিএমপি দুলাল ও সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজন। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি রিভলবার, একটি পিস্তল ও তিন হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, চাঁদপুরের হাইমচর ও পল্লবী এলাকায় থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। তাদের কাছে একটি পিস্তল, একটি রিভলবার ও তিন হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। তারা সবাই কন্ট্রাক্ট কিলার। তাদের গ্রুপে ৮-১০ জন সদস্য রয়েছে। এ গ্রুপটি ভাষানটেক, পল্লবী ও মিরপুরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে আসছে।
তিনি বলেন, গত ৩০ মার্চ ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি হত্যা চেষ্টার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। তারা বিভিন্ন সময় কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করত। এ ছাড়াও এ চক্রটি ভাষানটেক, কালশী, ক্যান্টনমেন্ট, মাটিকাটা এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক কারবারি ও প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করত। ওই দিনের ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে সাবুকে চাঁদপুরের হাইমচর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে বাকি দু’জনকে পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি একটি ঘটনা ঘটিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যায়। এমন দুর্গম এলাকায় অবস্থান নেয় যে, তাদের ধরে আনতে বেগ পেতে হয়। সাবুকে ছদ্মবেশে চর অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আরো বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে এসব সন্ত্রাসীরা যে অঞ্চলে থাকুক না কেন পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবেই। রাজধানীতে কোনো চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। এ ধরনের অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ লালন-পালন করবেন না। সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিভিন্ন সময় কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কিলিং মিশিনে অংশগ্রহণ করত। এ ছাড়াও তারা পরস্পর যোগসাজশে মাদক ব্যবসার বিস্তৃতি ও ভাষানটেক, কালশী, ক্যান্টনমেন্ট, মাটিকাটা এলাকায় চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তারের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করত। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে।
তাদের পৃষ্ঠপোষক কারা জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, বিদেশে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ইব্রাহীম ও যুবরাজের তত্ত্বাবধানে তারা কাজ করত বলে জানিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও এ চক্রের আরো আট থেকে দশজনের নামের তালিকা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিবি প্রধান বলেন, ঢাকা শহরে অবৈধ জমি দখল ও চাঁদাবাজির বিষয়ে তীক্ষè নজর রেখেছে ডিবি। এসব ঘটনা ঘটলে ডিবি তাদেরকে ছাড় দেবে না। কোথাও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে থানায় জানাবেন। ঢাকায় এ ধরনের ঘটনার পর ঢাকার বাইরে পালিয়ে গেলে কেউ রক্ষা পাবে না। আরব আলী নামে এক ঠিকাদার বলেন, ১৫ মার্চ একটি স্যুয়ারেজের কাজ তিনি পেয়েছিলেন। এই সন্ত্রাসীরা টাকা চেয়ে আসছিল, কিন্তু টাকা না দেয়ায় তারা ৩০ মার্চ দুপুরে কাজের সাইটে এসে যুবরাজ নাম বলে একজন আমার বুকে গুলি ছোড়ে। আমি পিস্তলে থাপা দিলে গুলি এসে পায়ে লাগে এবং চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা চলে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement