আইটিএসের আওতায় আসছে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের (আইটিএস) আওতায় আসছে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’ (এন-৮)। ইতোমধ্যে আইটিএস স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। এই ব্যবস্থার আওতায় এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি বিদেশী কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। একক উৎসভিত্তিক পরামর্শক হিসেবে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (কেওআইসি) এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কাল অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, আইটিএস একটি টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাপনায় রিয়েল-টাইম, ট্রাফিক এবং ভ্রমণের তথ্য নিয়ন্ত্রিত থাকে। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হওয়ায় এতে যানজট বহুলাংশে কমে যাবে এবং পণ্য ও মালবাহী যানবাহন দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে। এই কার্যক্রম বিশেষায়িত এবং বাংলাদেশে প্রথম। আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনার মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। এছাড়া যে ৩টি সেতুতে বর্তমানে টোল আদায় করা হচ্ছে আইটিএস স্থাপিত হলে সেতু ৩টিতে আলাদাভাবে টোল আদায়ের পরিবর্তে এক জায়গা থেকে সমন্বিতভাবে টোল আদায় করা হবে।
এ সম্পর্কিত এক প্রস্তাবে বলা হয়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনসহ ৪-লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। এই এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। এতে ৩টি সেতু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-৮৪৭.৩২ মিটার দীর্ঘ বুড়িগঙ্গা সেতু (চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু), ৮৫৩.২০ মিটার দীর্ঘ প্রথম ও দ্বিতীয় ধলেশ্বরী সেতু এবং ৪৫০ মিটার দীর্ঘ আড়িয়াল খাঁ সেতু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনসহ ৪-লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে (পদ্মা সেতু ছাড়া) টোল আদায়ের জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ চলমান আছে।
সূত্র জানায়, ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (এন-৮)’ এক্সপ্রেসওয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো বিশেষ করে ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা এলাকার এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্বিঘœ সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে, যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই এক্সপ্রেসওয়েতে চলমান ট্রাফিক জ্যামিতিক হারে বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমানে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (এন-৮)’ এক্সপ্রেসওয়েতে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কেওআইসিএ) আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ‘আইটিএস প্রবর্তন করে বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক করিডোরগুলোর নির্ভরযোগ্যতা এবং সুরক্ষা বাড়ানো’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) কর্তৃক আইটিএস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম ও দেশের প্রথম আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনা এবং এক্সপ্রেসওয়েটির অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যথোপযুক্ত সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের কার্যক্রম নেয়া প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪১১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে (হাইওয়ে সড়ক) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। কেইসি এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও ৪৫০৮টি সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৩৩২ কিলোমিটার। প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি সিস্টেম (আইটিএস)অনুসরণ করছে। টোল আদায়ে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসিএস) ব্যবহার করছে।
সরকার, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোনো ঘটনা মোকাবেলার জন্য জনস্বার্থে, সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি বা অন্য কোনো ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় কার্য সম্পন্ন করতে পারবে মর্মে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর বিধি ৬৮ (১) এ উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া, পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ১০৪ এর (ঘ) (২) (ই) অনুযায়ী যে কোনো মূল্যসীমার সেবা কাজের জন্য একক উৎস ভিত্তিক পরামর্শক (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) নিয়োগের বিধান রয়েছে।
এছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে নিয়োগের জন্য সেতু বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই আলোকে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (এন-৮)’ এক্সপ্রেসওয়েটি পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি সমন্বিত অংশ এবং বর্ণিত সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েটি একই করিডোরে অবস্থিত হওয়ায় এক্সপ্রেসওয়েটির রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায়ে আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (কেওআইসি) নিয়োগ দেয়া হবে।