২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনযাপনে খরচ বৃদ্ধি ৬.৮৮ শতাংশ

-

মানুষের আয়-রোজগার কমেছে। কিন্তু জীবনযাপনে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিগত তিন বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবনযাত্রার ব্যয় সর্বাধিক বেড়েছে। আর পণ্য ও সেবা-সার্ভিসের মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। অন্য দিকে একই সময়ে করোনা মহামারীর প্রভাবে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের আয় রোজগার ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ২০২০ সালে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের জীবনমান বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তারা বলছে, ওয়াসার পানি প্রতি হাজার লিটারে দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আবাসিকে বিদ্যুতের গড় মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক বিদ্যুতে মূল্য বেড়েছে গড়ে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা-স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রাসঙ্গিক বিষয়ের উপর প্রতিবেদন ২০২০ প্রকাশ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এইসব তথ্য জানায় ক্যাব। বক্তব্য রাখেনÑ ক্যাবের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবা-সার্ভিসের মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবা-সার্ভিসের সংগৃহীত মূল্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য পেয়েছে ক্যাব।
ক্যাব বলছে, ভোক্তার ঝুলিতে যেসব পণ্য ও সেবা রয়েছে সেগুলোকে পরিবারের মোট ব্যয়ের সাথে তুলনা করে পণ্য বা সেবার ওজনের ভিত্তিতে জীবনযাত্রা ব্যয়ের হিসাব করা হয়েছে। তবে এই হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১৯ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। পণ্য ও সেবামূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মানে হচ্ছে গত তিন বছরের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
জীবনমান, কর্মসংস্থান এবং জীবিকা ও জীবনের সুরক্ষায় ২০২০ ছিল ব্যতিক্রমী একটি বছর। ফেব্রুয়ারির পর থেকে সারা বছর কেটেছে শঙ্কা এবং সঙ্কটে। ২০১৯ ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আক্রান্ত রোগী থেকে সংক্রমণের মাধ্যমে ক্রমান¦য়ে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে মার্চের ৮ তারিখে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। লকডাউনে কৃষি খাত ব্যতীত অর্থনীতির অন্যান্য খাত বহুলাংশে স্থবির হয়ে পড়ে।
দেশের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইএফসির সমীক্ষা অনুযায়ী করোনার কারণে এসব খাতে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। অন্যান্য খাতেও কর্মসংস্থান হ্রাস পায়। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই এবং বেতন কমানো হয়। মানুষের আয়-রোজগার ব্যাপক হুমকিতে পড়ে। পরিকল্পনা কমিশনের হিসাবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়।
যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে
২০২০ সালে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বছরের শেষে আমন ধানের ভরা মৌসুমে চালের দামের ঊর্ধ্বগতি থেমে থাকেনি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চালের গড় মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর মধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে (পারিজা ও স্বর্ণা) ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ, পাইজাম চালে ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, বিআর৮ ও বিআর১১ চালে ২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মিনিকেট চালে ১৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, নাজিরশাইল চালে ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং সুগন্ধি চালের গড় দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। আটার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশী ও আমদানিকৃত ডালের দাম গড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। দেশী মসুর ডালে ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আমদানিকৃত মসুর ডালে ৪৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং খেসারির ডালে দাম বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ভোজ্যতেলের দাম গড়ে বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে খোলা পাম অয়েলে ১৭ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। চিনি ও গুড়ের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। শাক-সবজির মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে করল্লায় ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, কাঁচা পেঁপে ৩১ দশমিক ১৬ শতাংশ, দেশী আলুতে ২৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং আলুতে (হল্যান্ড) বেড়েছে ২৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০২০ সালে ২০১৯ এব তুলনায় গরু ও খাসির গোশতের দাম বেড়েছে গড়ে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মুরগির দাম ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ আর ডিমের দাম গড়ে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। মাছের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। গড়ে গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের গড় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফ্ল্যাট বাসায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বস্তিতে ঘর ভাড়া বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং মেসের ৮ সিট বিশিষ্ট রুমের ভাড়া বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্য দিকে সাধারণ শাড়ি কাপড়ের দাম বেড়েছে গড়ে ৯ শতাংশেরও বেশি।
এ দিকে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাস মালিকদের চাপে অর্ধেক আসন খালি রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহনের শর্তে ৬০ শতাংশ অধিক হারে ভাড়া আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়। অভিযোগ ছিল যাত্রীদের নিকট থেকে আরো অধিক হারে ভাড়া আদায় করা হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।
ক্যাব বলছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপ অনুযায়ী করোনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারভিত্তিক মাসিক আয় প্রায় চার হাজার টাকা কমে সাড়ে ১৫ হাজার টাকায় হ্রাস পেয়েছে। স্পষ্টতই ২০২০ সালে কারোনা মহামারীতে বেকারত্ব বৃদ্ধি ও আয় হ্রাস সাধারণ মানুষের জীবনমানে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জুনের শুরুতে অর্থনীতিতে আরোপিত প্রায় সব বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হয়। এ ছিল সরকারের অনন্য এক সাহসী পদক্ষেপ।
লিখিত প্রতিবেদনে গোলাম রহমান বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে পৃথক হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অধীনস্থ কোম্পানি ও সংস্থাগুলোর পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ জন্য সামান্য আর্থিক সুবিধাও ভোগ করেন। ফলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব সম্পাদন দুরূহ হয়ে পড়ে এবং নানা অনিয়ম, অমিতব্যয়িতা ও অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এসব পদে নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানি ও সংস্থাগুলোতে সুশাসন ও নিরপেক্ষতা অর্জন সম্ভব বলে মনে করি।
গোলাম রহমান বলেন, নিয়োগদান করে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে জবাবদিহিতা বাড়বে। তা ছাড়া সরকারের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর আর্থিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও সুবিবেচিত হবে। মোট খেলাপি ঋণের দ্ইু-তৃতীয়াংশের অধিক অর্থ আদায় রিট পিটিশন ও আইনি জটিলতার কারণে বছরের পর বছর বিলম্বিত হচ্ছে। আইন এবং আইনি প্রক্রিয়া সংস্কার করে দ্রুত, মামলা দায়েরের অনূর্ধ্ব এক বছরের মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে আর্থিক খাতের রক্তক্ষরণ ও আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল চুয়াডাঙ্গায় বাতাসে আগুনের হল্কা : গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ বৃষ্টির নামাজ আদায়ের নিয়ম আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি

সকল